ঢাকা: জাতীয় আয়কর মেলায় আগত করদাতাদের মধ্যে ই-পেমেন্টে (ইলেক্ট্রনিক লেনদেন) কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
কর সংগ্রহকারী কর্মকর্তারাও বলছেন, সনাতন পদ্ধতিতে (চালান ফরমের মাধ্যমে) ব্যাংকে আয়কর জমা দেওয়ার পরিমাণ কমে আসছে।
তবে অনলাইনে কর দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় কম ও ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন হলেও অতিরিক্ত ব্যাংক চার্জের কারণে করদাতাদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে।
রাজধানীর কাকরাইল এলাকার ব্যবসায়ী ইলিয়াছ হোসেন। গত ৫ বছর ধরে চালানের মাধ্যমে আয়কর দিয়েছেন তিনি। এবার ই-পেমেন্টে কর দেওয়ার কথা শুনে বেশ আগ্রহ নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি।

জানালেন, চালান লিখতে সময় লাগে, লাইনে দাঁড়ানোসহ কিছুটা ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়। এক পর্যায়ে বিরক্ত লাগে। এরপরও জমা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তো থেকেই যেতো!
তবে এবার ই-পেমেন্টে কর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কনফার্মেশন এলার্ট পেয়েছি। অনলাইনে এটাই প্রথম কর দেওয়া,’ যোগ করেন তিনি।
ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, সময় বাঁচানো আর নিরাপদে কর জমা দিয়েছি ঠিক আছে, কিন্তু ১১৫ টাকা জমা ব্যাংক চার্জে বেশ হতাশও হয়েছি। চার্জটা আরও কমানো দরকার।
তার সঙ্গে সুর মেলালেন কর দিতে আসা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা নুরুল আফসারও।
‘মানুষ সময় বাঁচাতে ই-পেমেন্টে কর দেবে মানুষ, তবে এতো চার্জ কেন?,’ বলেন তিনি।
সাবেক এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অনলাইন হলে চালানের মতো ভুল থাকবে না। হবে না কোনো হয়রানিও। করদাতাদের আগ্রহ বাড়াতে চার্জ সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত।

ক্রেডিট কার্ডে প্রথমবার আয়কর দিলেন ইবনুল কায়েস নামে একজন তরুণ ব্যবসায়ী। চার্জ বেশি নিয়ে হতাশা ঝারলেন তিনিও।
কায়েস বলেন, প্রথমবার আয়কর দিলাম। ই-পেমেন্টে ঝামেলামুক্তভাবে কর জমা দিতে পেরে বেশ আনন্দিত। কিন্তু এতো চার্জ কেন? আমরা তো করই দিলাম।
জাতীয় আয়কর মেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চালান ফরমের মাধ্যমে করদাতারা আয়কর জমা দিচ্ছেন। আর অনলাইনে কর জমা নিচ্ছে শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংক।
ই-পেমেন্ট বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছরের আয়কর মেলার চেয়ে এবার ই-পেমেন্টে আয়কর জমা দেওয়ার হার বেশি। এতেই বোঝা যায় যে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মেলার প্রথমদিন থেকে কর আদায়ের পরিমাণও বাড়ছে। ১৬ সেপ্টেম্বর মেলার প্রথমদিন ই-পেমেন্টে কর আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ২৯ টাকা।
দ্বিতীয় দিন (১৭ সেপ্টেম্বর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৯৩ টাকা। তৃতীয় দিন আদায় হয়েছে (১৮ সেপ্টেম্বর) ১ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৫ টাকা।
মেলার চতুর্থ দিন শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ছুটিরদিন হওয়ায় কর বিবরণী জমা দেওয়ার সুবিধার্থে সময় ৩ ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন, শনিবার ১০ লাখ টাকা আদায় হবে।
তথ্য ডেস্কে দায়িত্বরত রোভার স্কাউটের সদস্য জাফরিনা হক বাংলানিউজকে বলেন, মেলার শুরু থেকে মনে এবার গতবছরের চেয়ে ই-পেমেন্টে কর দেওয়ার হার বেড়েছে।
‘প্রথমে আগ্রহ নিয়ে তথ্য জানতে এলেও চার্জ শুনে অনেক করদাতাই বিমুখ হচ্ছেন ই-পেমেন্ট থেকে। এরপরও তারা চালান ফরমে ভুল আর সময় বাঁচাতে ই-পেমেন্ট বুথেই আসছেন,’ যোগ করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাসিস্টেন্ট অপারেশন ম্যানেজার কোয়েশ আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো তফসিলি ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট, ভিসা ও প্রি-প্রেইড কার্ড দিয়ে সহজেই ই-পেমেন্টে কর দেওয়া যায়। এতে করদাতারা ঝুঁকিমুক্তও থাকেন।
তিনি বলেন, ই-পেমেন্টে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর জমা দেওয়া যায়।
করদাতাদের আগ্রহও বেশি।
ই-পেমেন্ট বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ করদাতা এখনও এ লেনদেনে অভ্যস্ত নন। তবে দিনেদিনে এ সেবাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
চার্জ প্রসঙ্গে কোয়েশ বলেন,‘উন্নত এ সেবা পেতে চার্জ তো একটু লাগবেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
আরইউ/এমএ
** অনলাইন লাইভে জাতীয় আয়কর মেলা
** আয়কর নিয়ে ‘সোস্যাল মিডিয়া সংলাপ’ শনিবার