খুলনা: ‘এক দুই তিন চার মাছুদ তুই গদি ছাড়’, ‘কুয়েট ভিসির গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’।
প্রতিনিয়ত এ ধরনের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে কুয়েট ক্যাম্পাস।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে তারা মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি সম্বলিত পোস্টার লাগান।
শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে বলেন, আমাদের আন্দোলন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়; প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আমরা আশা করি, যেসব শিক্ষকরা শঙ্কিত তারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। আমাদের অসহায়ত্ব দেখে যদি আপনারা না আসেন তাহলে কে আসবে! ভিসি বলেছেন, সরকার চাইলে তিনি সরে যাবেন। যে সরকার আমরা রক্তের বিনিময়ে নিয়ে এসেছি সেই সরকার কী ছাত্রদের বিপক্ষে? হাসিনার আমলেও কোনো আন্দোলনে ভিসি ছাত্রদের এভাবে বহিষ্কার করেননি। আমাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং নতুন ভিসি নিয়োগ দিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
এদিকে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির বিপক্ষে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়। দুর্বার বাংলার পাদদেশে গিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তারা। এ সময় শিক্ষক-কমকর্তারা শিক্ষার্থীরা কুয়েট উপাচার্যকে হয়রানি করছে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানান।
মঙ্গলবার রাতে হলে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেন, কুয়েট প্রশাসন হলের ইন্টারনেট ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
অপরদিকে, কুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এবার অভিভাবকরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুই দিন ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে নিজেরাই একের পর এক হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন।
উল্লেখ্য, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সাথে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রোববার (১৩ এপ্রিল) বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৫
এমআরএম/এসএএইচ