ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বিদেশি পর্যবেক্ষক অনুমোদনের ক্ষমতা হাতে চায় ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
বিদেশি পর্যবেক্ষক অনুমোদনের ক্ষমতা হাতে চায় ইসি

ঢাকা: নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক অনুমোদনের ক্ষমতা সরকার নয়; বরং নিজেদের কাছেই রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন দাবি পেছনে সংস্থাটির যুক্তি, এতে বিদেশিদের ভোট পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে নো অবজেকশন দিলে নির্বাচন কমিশন অন্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থেকে যায়। কেননা, সরকার বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে অনুমোদন দেওয়া হয় না। অতীতে এমন নজির রয়েছে। তাই এই ক্ষমতাটি ইসি তার নিজের কাছেই রাখতে চায়।

জানা গেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধন করে তাই ওই বিধান আনার কথা ভাবছে কমিশন। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কমিটি একটি প্রস্তাব করেছে। বিষয়টি ইসির সভায় উত্থাপন করা হবে। কমিশন সভায় অনুমোদন হলেই তা বাস্তবায়ন হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালায় তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। তবে পর্যবেক্ষক বাছাই করে অনুমোদনের ক্ষমতা ইসির কাছে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি ৩৪ দেশ ও চারটি সংস্থার শতাধিক পর্যবেক্ষককে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংস্থা ১৬৮ জন ভোট দেখতে আসতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে ইসির আমন্ত্রিত ছিলেন মাত্র ১৯ জন।

এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে ৩৮ জন, বিভিন্ন মিশনের ৬৪ জন এবং বাংলাদেশস্থ বিভিন্ন দূতাবাসে বা হাইকমিশনে কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন; মোট ১৬৩ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।

এদিকে দেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালাও সংশোধন করার কথা ভাবছে ইসি। এক্ষেত্রে দেশি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এতে সঠিকতা না পেলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা পুনর্মূল্যায়ন করব। এতে যাদেরটা রাখা যায় তারা থাকবে। অন্যরা বাদ পড়বে। এক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যদি নতুন করে নিবন্ধন দিতে হয়, আমরা সেটাও দেখব।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা একটা খসড়া দাঁড় করেছি পর্যবেক্ষকদের জন্য। কিছু কিছু পর্যবেক্ষক তো বাতিল হবেই। যদি কমিশন মনে করে সব বাতিল হবে। এছাড়া পর্যবেক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও বাড়তে পারে। আমরা এসএসসির পরিবর্তে এইচএসসি করার কথা ভাবছি। এতে কাউকে ছোট করার জন্য নয়। একটা লেবেল যাতে থাকে সেজন্য এটা করা হচ্ছে।

২০০৮ সাল থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১১ সালে ১২০টি সংস্থা নিবন্ধন পায়। সে সময় এটিএম শামসুল হুদার কমিশন নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়িয়ে পাঁচ বছর করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ১১৮টি এবং ২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সংস্থাগুলোর মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক কারণে নিবন্ধন পেয়েছিল বলে নানা সময় অভিযোগ এসেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দল থেকেই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বলে বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল। সে সময় সেগুলো বাদ দেওয়া হলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বহাল থেকে যায়।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমরা বিতর্কিত কোনো প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকুক সেটা চাই না। তাই পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে খুব দ্রুতই পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
ইইউডি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।