ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাইক্কা বিলে বিরল পরিযায়ী ‘খয়রা কাস্তেচরা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
বাইক্কা বিলে বিরল পরিযায়ী ‘খয়রা কাস্তেচরা’ বাইক্কাবিলে বিরল প্রজাতি ‘খয়রা-কান্তেচরা’। ছবি- সাঈদ বিন জামাল

মৌলভীবাজার: কয়েকদিন বাদেই তাদের ফিরে যাওয়ার পালা। মার্চের শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা ফিরে যাবে, যেখান থেকে তারা এসেছিল আমাদের জলাশয়ে।

ফিরে যাওয়ার এ যাত্রায় রয়েছে ডানায় ভর করে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন। প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুতে বাইক্কা বিল ভরে উঠে পরিযায়ী পাখিদের কলতানে।

বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখি পৃথিবীর উত্তরগোলার্ধ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশের জলশয়গুলোতে। নির্দিষ্ট তিন থেকে চার মাস কাটিয়ে সময় হয়েছে পরিযায়ীদের ফিরে যাওয়ার। বাইক্কাবিলে বিরল প্রজাতি ‘খয়রা-কান্তেচরা’।  ছবি- সাঈদ বিন জামালএসব পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম ‘খয়রা কাস্তেচরা’। এদের শরীরে রয়েছে গাঢ় তামাটে আর ধাতব সবুজ-বেগুনির সৌন্দর্য। এ পাখিদের সহজে দেখা যায় না। বেশিরভাগ সময় বাইক্কা বিলের মধ্যিখানে অবস্থান করে। অন্যপ্রজাতির পাখিদের ভিড়ে তারা নিজেকে সুরক্ষা দান করে।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে বাইক্কা বিলে পরিযায়ীদের মিলনমেলায় ভরে উঠলো। দূরবীক্ষণযন্ত্রে চোখ রাখতেই নানা প্রজাতির পাখিদের জীবন্ত ছবিগুলো ভেসে এলো। এগুলো চোখের দ্বারা হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে অসম্ভব ভালো লাগার জন্ম দিয়ে চলেছে। ‘খয়রা কাস্তেচরা’দের দেখা গেল। তারা বিরতিহীনভাবে কাদায় মুখ গুঁজে খাবারের অনুসন্ধানে গভীর ব্যস্ত! 

আমাদের মিঠা পানির অগভীর জলাশয়গুলোতে সম্মিলিতভাবে বিচরণ করে এরা। বিশেষ করে জলজ উদ্ভিদে ঢাকা হাওর-বিল অথবা কৃষি জমিগুলোতে একাকী বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়।

ঘন উদ্ভিদ সমৃদ্ধ জলাশয় এড়িয়ে চলে ‘খয়রা কাস্তেচরা’ । স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতেও শিকার খোঁজে। শিকার খুঁজতে গিয়ে হাঁটু জলের বেশি নামে না। এরা ঝাঁক বেঁধেও বিচরণ করে। বাইক্কাবিলে বিরল প্রজাতি ‘খয়রা-কান্তেচরা’।  ছবি- সাঈদ বিন জামালবন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের বিরলপ্রায় পরিযায়ী প্রজাতি ‘খয়রা কাস্তেচরা’। একে ‘চকচকে দোচরা’ নামেও ডাকা হয়। ইংরেজিতে নাম Glossy Ibis এবং বৈজ্ঞানিক নাম Plegadis falcinellus আমাদের দেশে বর্তমানে কদাচ হাওরে যে নমুনা দেখা যায় তা ছোট, একাকী বা মাঝারি একটি দলে থাকে। পানির কাছে বসবাসরত অন্যান্য পাখিদের সঙ্গে এদের বেশি দেখা যায়।

তিনি আরো বলেন, ‘খয়রা কাস্তেচরা বাইরে থেকে দেখতে কালচে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে লালচে বাদামি শরীর ও উজ্জ্বল বেগুনি ডানা। প্রজনন ঋতুতে এদের গায়ে লাল আভা বেগুনির সঙ্গে মিলে এক অপরূপ রঙের সৃষ্টি করে। ’

খয়রা কাস্তেচরার শারীরিক গঠন ও খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দৈর্ঘ্য সাধারণতঃ ৬৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন এক কেজির চেয়ে সামান্য কম। ডাঙায় খাদ্য পোকামাকড় শূককীট, টিকটিকি এবং পানি থেকে ধরে ছোট মাছ, কেঁচো, ছোট সাপ, ব্যাঙ, অন্যান্য ছোট জলচর প্রাণী। এ ছাড়াও মৌসুম ভেদে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনশীল। বাইক্কাবিলে বিরল প্রজাতি ‘খয়রা-কান্তেচরা’।  ছবি- সাঈদ বিন জামালবিশ্ব জীববৈচিত্র্য গবেষণা ও সংরক্ষণ সংস্থা ‘আইইউসিএন’ এদের Least Concern (ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত) প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বিশ্বব্যাপী জলাভূমির পরিবেশ ধ্বংস এবং অবাধে শিকার এদেরকে আমাদের দেশে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানান সাঈদ বিন জামাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।