ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাড়ছে তাপমাত্রা, নিজেদের বাঁচাতে হলেও গাছ লাগাতে হবে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
বাড়ছে তাপমাত্রা, নিজেদের বাঁচাতে হলেও গাছ লাগাতে হবে

ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) প্রাঙ্গণে চলছে ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯’। ‘আসুন, বায়ুদূষণ রোধ করি’ স্লোগানে চলমান এ মেলায় বুধবার (৩ জুলাই) পর্যন্ত ১৩ দিনে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ চারাগাছ। আয়োজকরা যেমন চারাগাছ ক্রয়ে মানুষের আগ্রহে সন্তোষ প্রকাশ করছেন, তেমনি মেলায় আসা দর্শনার্থীরা বলছেন- গাছের চারা লাগানোর কাজ আগে শখ থাকলেও এখন পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় হয়েছে বিধায় সবার আগ্রহ বাড়ছে।

বিশ্বে প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে এবারের ঈদুল ফিতর ৫ জুন উদযাপিত হওয়ায় পরিবেশ দিবসের আয়োজন পিছিয়ে ২০ জুন নির্ধারণ করা হয়।

সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধনের পর সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মজেছেন চারাগাছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বৃক্ষপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর থাকছে মেলা প্রাঙ্গণ।
  
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে মেলায় চারাগাছ কিনতে এসেছেন আব্দুল কাদির প্রধান (৫৫)। ছাদবাগানের জন্য তিনি চারা খুঁজছিলেন। মেলা প্রাঙ্গণে তিনি বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘গাছের চারা কেনা আমার এক ধরনের শখ ও নেশা। ইতোমধ্যেই বাড়ির ছাদে সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের ফলের গাছে ভরপুর। পেঁপে, মরিচ ও পুঁইশাক এখন কেনা লাগে না। অনেক ধরনের ফলের গাছও আছে। বৃক্ষমেলায় এসেছি জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা ও কিছু ক্যাকটাস কেনার জন্য। ’জাতীয় বৃক্ষমেলায় চারাগাছ।  ছবি: বাংলানিউজকাদির প্রধান জানান, গাছ পরিচর্যার জন্য কিছু যন্ত্রপাতিও কিনেছেন তিনি। গাছ পরিচর্যা ও গাছের ছায়ায় বসে থাকতে তার মানসিক প্রশান্তি হয়। নিজের হাতে লাগানো গাছের ফলের যে স্বাদ তা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান কাদির।

নগরীর বাড্ডা থেকে সপরিবারে মেলায় এসেছেন সাইফুল ইসলাম জয়। তিনি প্রাইভেটকার ভর্তি করে চারা কিনে বাড়ি ফিরছেন। সাইফুল বলেন, ‘ছাদে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস কিনলাম। এছাড়া ছাদে আম, মাল্টা, লেবু, কমলা ও আনার লাগাবো। ’
 
স্ত্রী নাজমা ফারহানাকে সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষমেলায় এসেছেন হাসিবুল ইসলাম। হাসিবুলের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে বাগান আছে। বনানীর বাসার ছাদেও গাছ লাগিয়েছেন বেশ। গ্রামের বাগানের জন্য কিছু ফলের গাছ কিনবেন তিনি।  
জাতীয় বৃক্ষমেলায় চারাগাছ।  ছবি: বাংলানিউজহাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার বনানীর বাসার ছাদে গাছে ভরপুর। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে ফলের বাগান আছে। সেই বাগানের জন্য আম, লিচু, নারিকেলসহ কয়েকশ’ চারা কিনবো। অনেকের কাছে নতুন মডেলের মোটরবাইক কেনা যেমন ফ্যাশন, আমার কাছে গাছ লাগানো ফ্যাশন। ’
 
হাসিবুলের ভাষ্যে, ‘দেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। সামনে গাছ লাগানো ছাড়া এই দেশে বসবাস করা মুশকিল হয়ে যাবে। নিজেদের বাঁচাতে হলেও গাছ লাগাতে হবে। তাই গাছ লাগানো সবারই ফ্যাশন হওয়া উচিত। ঢাকা শহরের ফুটপাত দখল করে গাছ লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি। ’
 
বন ও পরিবেশ অধিদফতর আয়োজিত এবারের বৃক্ষমেলায় স্টলের সংখ্যা  ১০০টি। সারাদেশে বিক্রি ও বিতরণের জন্য ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার চারা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ চারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।  জাতীয় বৃক্ষমেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণা।  ছবি: বাংলানিউজআয়োজকরা জানান, মেলায় ৩০০-৪০০ প্রজাতির চারা পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বৃক্ষমেলায় বেচাকেনা বেড়েছে। ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ চারাগাছ, যার বাজারমূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।

মেলার দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে। ফলে মেলায় বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা পাঁচ লাখ চারা বিক্রি করে ফেলেছি। আমাদের সবার উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য গাছ লাগানো। সবার নিকট একটাই আবেদন, সবুজে বাঁচতে আসুন একটা করে চারা রোপণ করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।