ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শ্রীমঙ্গলে মিললো ‘নতুন প্রজাতির’ সাপ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
শ্রীমঙ্গলে মিললো ‘নতুন প্রজাতির’ সাপ শ্রীমঙ্গলে কলার আড়ত থেকে উদ্ধার নাম-পরিচয়হীন সাপ

মৌলভীবাজার: নাম না জানা একটি ‘নতুন সাপ’ পাওয়া গেলো শ্রীমঙ্গলে। স্থানীয় কলার আড়তে এমন একটি সাপ পাওয়া গেলো যার নাম ও পরিচয় এখনও সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বন্যপ্রাণী গবেষকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন এ সাপটির সঠিক পরিচিতি নিয়ে। কেউ বলছেন বিষধর কোবরা বা গোখরা প্রজাতির। আবার কেউবা বলছেন ঢোঁড়া প্রজাতির সাপ হতে পারে এটি। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাপটি কলার আড়ত থেকে উদ্ধার করে আনেন শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক সঞ্চিত দেব।  

মঙ্গলবার বিকেলে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে গিয়ে দেখা যায়, সাপটি স্থির হয়ে বসে রয়েছে একটি প্লাস্টিকের বড় কন্টেইনারে।

সাপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার। কন্টেইনারের বাইরের দিক থেকে আঙুলের কয়েকটি টোকা দেওয়ার পর কিছুটা নড়েচড়ে উঠতে দেখা যায়।  

বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বাংলানিউজকে বলেন, সাপটি নতুন ধরনের হওয়ায় আমরা এর ছবি তুলে তিনজন বন্যপ্রাণী গবেষকের কাছে পাঠাই। তারা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান এবং বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ। ড. মনিরুল খান এবং ড. কামরুল হাসান দু’জনই একটি বিশেষ কর্মশালায় ভারতে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত কেউই সাপটিকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারেননি।  

সজল দেব সাপটির পরিচিতি তুলে ধরে বলেন, সাপটি ছোট আকারের। আমার ধারণা এটি কিং কোবরা বা গোখরার ছানা হবে। এর গলার নিচের দিকে হালকা হলুদ রঙের আভা রয়েছে।  

নতুন প্রজাতির সাপতবে গোখরা হওয়ার সব সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে এ সাপ প্রসঙ্গে বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, এটি গোখরা হতে পারে না। কারণ গোখরা হলে সে কিছু সময় এক জায়গায় কখনই স্থির থাকতো না। ঘন ঘন ফণা তোলার চেষ্টা করতো। কারণ, গোখরা সাপদের বৈশিষ্ট্য হলো উত্তেজিত, বিরক্ত বা ভয় পেলেই সে ফণা তুলবে। তাকে বিরক্ত করলেও সে যেহেতু ফণা তুলছে না তাই এটি গোখরা প্রজাতির সাপ নয়।  

তিনি আরও বলেন, এখন বিষয়টা হচ্ছে- এই সাপের পিঠের উপরে তিনকোণা বা শিরদাঁড়ের একটা দাগ রয়েছে। এটা কেউটে (Monocellate Cobra বা Bengal Cobra) বা শঙ্খিনী (Banded Krait) সাপের থাকে। কিন্তু এটা কোবরা বা ক্রেইটও নয়। কারণ এর বডির শেপও আলাদা। মাথা বা বডির শেপও কোবরা এবং ক্রেইটের সঙ্গে মেলে না।  

আদনান আজাদ আসিফ আরও বলেন, যেহেতু আমি সাপটি চিনতে পারিনি, তাই এ সাপের ছবি আমি ড. মনিরুল খান স্যারকে পাঠাই। তিনি এখন ভারত অবস্থান করছেন। তিনি আমাকে বলেন, ওই প্রশিক্ষণে উপস্থিত বন্যপ্রাণী গবেষকদের এই ছবিটি দেখলে তারাও সাপটিকে শনাক্ত করতে পারেননি। তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেই সাপটিকে দেখতে আসবেন শ্রীমঙ্গলে।  

আমার ধারণা, এই সাপটি ঢোঁড়া বা পাইন্না প্রজাতির সাপের একটি বিশেষ প্রজাতি হতে পারে। অথবা, এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রজাতির একটি সাপের রেকর্ড হতে পারে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।