ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা গাছে ‘অতিমাত্রায়’ ছত্রাকনাশক

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
চা গাছে ‘অতিমাত্রায়’ ছত্রাকনাশক চা গাছের পাতায় অতিরিক্ত ছত্রাকনাশক

মৌলভীবাজার: চা বাগানে ছিটানো হচ্ছে অতিমাত্রায় ছত্রাকনাশক ওষুধ। ওষুধটির নাম ‘কপার অক্সিক্লোরাইড’। এর অতিমাত্রার ফলে চা গাছে ক্ষতিকর প্রভাবসহ রয়েছে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকও। শুধু তাই নয়, এমন রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশের উপরও পড়ছে মারাত্মক প্রভাব। 

চা বাগানের সর্দার বা কীটনাশক শ্রমিকরা ভুলবশত এমন ছত্রাকনাশক মিশ্রণটি প্রয়োগ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোনো নজরদারি।  

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, কপার অক্সিক্লোরাইড মূলত ছত্রাক আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়।

চা পাতার বাড়ন্ত পর্যায়ে পাতার ঝলসানো রোগ ও পাতার দাগ রোগ দূরীকরণে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণে পানির সঙ্গে সংমিশ্রণ না করে মাত্রাতিরিক্ত বা অতিমাত্রায় ব্যবহার করা হলে এর ক্ষতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।     

কমলগঞ্জ উপজেলার মিরতিঙ্গা চা বাগানের একটি সেকশনে সম্প্রতি এভাবে অতিমাত্রায় ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। দ্রবণটি চায়ের পাতায় শুকিয়ে সাদা রং ধারণ করেছে। সেকশনের বেশ কিছু জায়গায় এমন বেশি মাত্রায় কীটনাশকের অবস্থা বিরাজ করছে।  

মিরতিঙ্গা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক আমিনুল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আসলে অতিমাত্রায় কপার অক্সিক্লোরাইড এখানে ব্যবহার করা হয়নি। মূলত বিটিআরআইর নির্দেশনা মেনেই চা গাছের দৈহিক সুরক্ষার জন্য তা স্প্রে করা হয়েছে। এতে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।

...এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রায়হান মজিদ হিমেল বাংলানিউজকে বলেন, কপার অক্সিক্লোরাইড চা গাছের পাতায় স্প্রে করলে সাধারণত সাদা সাদা দাগ থাকে। এজন্য আমরা প্রতিটি বাগানকেই সাজেস্ট করি যে, প্লাকিং (পাতা চয়ন) এর পরে তা সুনির্দিষ্ট মাত্রায় স্প্রে করতে। তাহলে ৭ থেকে ১০ দিন পরে যখন পাতা তুলতে আসবে তখন আর চা পাতার উপর এমন দাগগুলো থাকে না। কিন্তু প্লাকিং করার আগে যদি স্প্রে করে তাহলে সাদা সাদা দাগ ফুটে ওঠাসহ স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটিও থেকে যায়।    

তিনি আরও বলেন, যে কোনো ওষুধই তার নির্দিষ্ট পরিমাণ থেকে অতিরিক্ত মিশ্রণ করে প্রয়োগ করা হলে তার উপকারের দিকটির চেয়ে ক্ষতির দিকটি বেড়ে যায়। এজন্য আমরা চা বাগানগুলোকে বারবার বলি যে- চা পাতা তোলার পরপরই আমাদের বিটিআরআই পরীক্ষিত রাসায়নিক ওষুধগুলো প্রয়োগ করতে। তাহলে নতুন কুঁড়িগুলো এক সপ্তাহ বা দেড় সপ্তাহ পর উত্তোলন করা হলে এতোদিনে রৌদ্রতাপ বা বৃষ্টির পানিতে সেই চা গাছের পাতায় জমে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলোর ক্ষতিকর দিকটি আর থাকে না। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটি তখন নেই বললেই চলে।  

চা বাগানগুলো মূলত বড় ড্রাম ব্যবহার করে। ২০০ লিটারের সেই ড্রামে প্রায় ৫০০ বা ৫৫০ গ্রাম ওষুধ মিশ্রণই হলো আমাদের নির্দেশিত সঠিক মিশ্রণপদ্ধতি। এর কম বা বেশি দু’টি প্রকারই এই ছত্রাকনাশকের কার্যকারিতাকে ব্যর্থ করবে বলে জানান বিটিআরআইর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রায়হান মজিদ হিমেল।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।