ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রজনন মৌসুমে গোঙানির শব্দ করে ‘এশীয়-শামখোল’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
প্রজনন মৌসুমে গোঙানির শব্দ করে ‘এশীয়-শামখোল’ বাইক্কা বিলের অধিবাসী শামুকখোল। ছবি: আদনান আজাদ আসিফ

মৌলভীবাজার: বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের কাছাকাছি। মৃদু শীত নামতে শুরু করেছে অগ্রহায়ণ ঘিরে। পাখিময় বাইক্কা বিলের পানিতে ক্রমেই পাখিদের শীত মৌসুমের মেলা বসতে শুরু করেছে।

এ বিলের পুরনো বাসিন্দা ‘এশীয় শামখোল’। তবে সারা বছর দেখা পাওয়া যায় না।

বছরের কয়েকটি মাস লাপাত্তা থাকে সে। এর ইংরেজি নাম Asian Openbill  এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans

‘এশীয় শামখোল’ বড় আকারের জলচর পাখি। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে এদের এক প্রজাতি পাওয়া যায়। একে ‘শামুকখোল’ নামেও ডাকা হয়। এরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি।    

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, এই ছবিটি আমি শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল থেকে তুলেছি। শামুকখোল হাওর, বিল, মিঠাপানির জলাভূমি, ধানক্ষেত, উপকূলীয় প্যারাবন ও নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ায়। সচরাচর ছোট ঝাঁকে থাকে। বড় কলোনিতে রাত্রিবাস ও প্রজনন করে। খাবারের অভাব না হলে এরা সাধারণত এক জায়গা থেকে নড়ে না। কমবয়সী শামুকখোলেরা উড়তে শেখার পরে বিশাল অঞ্চলজুড়ে পরিভ্রমণ করে থাকে। সাদা-কালো ছবিতে যুগল শামুকখোয়ের প্রণয়।  ছবি: আদনান আজাদ আসিফ

পাখির রিং এর তথ্য যোগ করে তিনি বলেন, ভারতের ভরতপুরে রিং পরানো একটি কমবয়সী শামুকখোলকে প্রায় ৮শ কিমি পূর্বে ও থাইল্যান্ডের রিং পরানো আরও একটি পাখিকে ১৫শ কিমি পশ্চিমে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এর মানে হলো এরা বহুদূর পর্যন্ত বিচরণ করার ক্ষমতা রাখে।

খাদ্যাভাস সম্পর্কে আসিফ বলেন, ভোরে আবাস ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। ডানা ঝাপটিয়ে দলবেঁধে জলাভূমির দিকে উড়ে যায়। দিনের উষ্ণতম সময়ে ডানা না নাড়িয়ে বিশেষ কৌশলে ধীরে ধীরে চক্রাকারে আকাশে উড়তে উড়তে উঠে যায় আর দলবেঁধে ঘুরতে থাকে। আবার জলাশয়ের একদিক থেকে আরেকদিকে ক্রমান্বয়ে উড়ে উড়ে খাদ্যের অনুসন্ধান চালায়।

‘পানির ধারে বা অগভীর পানিতে হেঁটে হেঁটে কাঁদায় ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে- শামুক আর ঝিনুক। এছাড়াও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ব্যাঙ, কাঁকড়া প্রভৃতি খায়। সচরাচর পানির নিচে শামুকের খোল ভেঙে এরা পানির উপর মাথা তুলে শামুকের মাংস গিয়ে খায়।

খাবার কৌশল সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, শামুকখোলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের বিশেষ গঠন এক ধরনের জাঁতিকলের মতো কাজ করে। প্রকৃতিপ্রদত্ত এ জাঁতিকলের মাধ্যমে শামুকখোল জলাভূমির শামুক ভেঙে খায়। গবেষণায় দেখা যায়, শামুক ভাঙার জন্য নয়, বরং পিচ্ছিল শামুক ভালোভাবে ঠোঁটে আটকানোর জন্য তার ঠোঁটের গঠন এমন অদ্ভুত হয়।

শারীরিক গঠন ও প্রজনন সম্পর্কে আদনান বলেন, শামুকখোলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ সেন্টিমিটার। সাদাটে দেহ। শুধু ডানা ও লেজের প্রান্ত কালো। বিশাল কালচে চঞ্চু (ঠোঁট)। চঞ্চুর দুই পাটির মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। এপ্রিল-জুলাই এদের প্রজনন মৌসুম। তখন কালচে পা হালকা গোলাপি হয় এবং তারা গোঙানির মতো শব্দে ডাকে।

শামুকখোলের সবচেয়ে বড় কলোনি বগুড়াতে রয়েছে। কয়েক হাজার পাখি প্রতি বছর শিবগঞ্জে প্রজনন করে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।