ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মহাকাশে নভোচারীদের প্রস্রাব, এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের গল্প

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
মহাকাশে নভোচারীদের প্রস্রাব, এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের গল্প

মহাকাশ অভিযান শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে রোমাঞ্চ, উচ্চ প্রযুক্তি আর সাহসী নভোচারীদের ছবি। কিন্তু মহাকাশের ঝকঝকে ছবির আড়ালে এমন কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ লুকিয়ে আছে, যেগুলো হয়তো আমরা কল্পনাও করি না।

এমনই একটি চ্যালেঞ্জ হল— মহাকাশে প্রস্রাব করা!

পৃথিবীতে যেখানে এটা একেবারেই স্বাভাবিক রেচন প্রক্রিয়া, মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় মহাকাশে সেটা রীতিমতো এক বিরাট সমস্যা। মহাকাশে ফলে তরল পদার্থ ঠিকমতো নিচে পড়ার বদলে ভেসে বেড়ায়। কল্পনা করুন তো, মহাকাশযানের ভেতরে প্রস্রাব ভেসে বেড়ালে কী অবস্থা হতো!

এই সমস্যার সঙ্গে মানুষকে প্রথম মুখোমুখি হতে হয়েছিল ১৯৬১ সালে। নাসার প্রথম মহাকাশচারী অ্যালান শেপার্ড মহাকাশযাত্রার ঠিক আগে, লঞ্চপ্যাডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে, বাধ্য হয়ে নিজের পোশাকেই প্রস্রাব করে ফেলেছিলেন তিনি। সেই মুহূর্তেই যেন চিরতরে ভিজে গিয়েছিল মানবজাতির প্রথম মহাকাশ ছোঁয়ার ইতিহাস!

এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর নাসা বুঝতে পারে, মহাকাশযানে প্রস্রাবের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কতটা জরুরি। খাবার যেমন দরকার, তেমনি শরীরের বর্জ্য বের করাও যে বেঁচে থাকার অপরিহার্য অংশ— সেটা তখনই বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করেন।

প্রথম দিকের সমাধান ছিল বেশ সাদাসিধে। নাসার প্রাক্তন নভোচারী রাস্টি শোইকার্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তখন পুরুষ নভোচারীদের জন্য ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ নামে এক ধরনের বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। এটি ছিল এক ধরনের নরম কন্ডোমের মতো বস্তু, যা পুরুষাঙ্গে পরিয়ে, একটি নলের মাধ্যমে প্রস্রাব সংগ্রহ করা হতো। যাতে মহাকাশযানের ভেতর তরল পদার্থ ভেসে না বেড়ায়।

কিন্তু সমস্যার এখানেই শেষ ছিল না। সব নভোচারীর শারীরিক গড়ন এক নয়— তাই অনেক সময় এই 'কন্ডোম ক্যাথেটার' ঠিকমতো ফিট হত না, ফুটো হয়ে যেত, আর সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হতো ভয়ানক অস্বস্তি।

নাসা তখন বুদ্ধি করে তিন রকম সাইজের যন্ত্র বানায়— ছোট, মাঝারি আর বড়।  

তবে এই বিষয়ে কৌতুহল উদ্দীপক তথ্য জানান রাস্টি। তিনি বলেন, নভোচারীরা বেশিরভাগ সময়ই "বড়" সাইজের ক্যাথেটার বেছে নিতেন! একটু ইগোর ব্যাপার ছিল বোধহয়!

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়েছে। আজকের দিনে পুরুষ ও নারী উভয় নভোচারীদের জন্যই এমন সিস্টেম তৈরি হয়েছে, যা নিরাপদ, কার্যকর এবং আরামদায়ক। পুরনো সেই কন্ডোম ক্যাথেটার ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে — কিন্তু সেই শুরুর দিনগুলোর গল্প আজও আমাদের হাসায়, আর সেই সব সাহসী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত করায়।

মহাকাশ অভিযানের নেপথ্য কাহিনিগুলো আসলেই কম রোমাঞ্চকর নয়— বরং কখনো কখনো পৃথিবীর গল্পগুলোর চেয়েও বেশি মানবিক!

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।