ঢাকা: ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উদ্যান প্রতিবারের মতো এবারও ফুটেছে ক্যামেলিয়া, যে ফুল দেখে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনের ‘সিবিলী’ অংশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘ক্যামেলিয়া হাউস’।
ডিসেম্বর মাস এলেই ক্যামেলিয়ার ফুলে ফুলে ঘিরে যায় গাছগুলো। এর পাতা গাঢ় সবুজ। ফুলটি দেখতে অনেকটা গোলাপ ফুলের মতো হলেও সৌন্দর্যে ক্যামেলিয়ার তুলনা শুধুই ক্যামেলিয়া।
ইংরেজ কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ‘ডেফোডিলস’ ফুল নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্যামেলিয়ায় মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন অসাধারণ কবিতা ‘ক্যামেলিয়া’।

undefined
সেখানে কবিগুরু লিখেছেন-
‘বাইরে থেকে মিষ্টি সুরে আওয়াজ এল, ‘বাবু, ডেকেছিস কেনে।
বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া সাঁওতাল মেয়ের কানে,
কালো গালের ওপর আলো করেছে।
সে আবার জিজ্ঞেস করলে, ‘ডেকেছিস কেনে?’
আমি বললেম, ‘এইজন্যেই। ’
তারপরে ফিরে এলেম কলকাতায়। ’
বলধা গার্ডেনের হাজারো উদ্ভিদের ভিড়ে ক্যামেলিয়া কবিকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তাই ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কলকাতা ফিরে গিয়ে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের ২৭ শ্রাবণ বিখ্যাত ‘ক্যামেলিয়া’ লিখেছিলেন কবিগুরু। কবিতাটি ‘পুনশ্চ’ কাব্যগ্রন্থের অর্ন্তগত।
রবি ঠাকুরের এ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও। সজল সমাদ্দার এটি নির্মাণ করছেন। প্রযোজনা করেছেন ইনফোকেয়ার।

undefined
ইতিহাস বলে, ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ভ্রমণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এটাই তার শেষ ঢাকাযাত্রা। ওই সময় বলধা গার্ডেনসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন বিশ্বকবি।
বলধা গার্ডেনে বেড়াতে এসে এখানকার জয় হাউসে উঠেছিলেন কবি। সেখানে একরাত অবস্থান করেছিলেন তিনি।
১৯০৯ সালে তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর জেলা) বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের ফুল ও দুর্লভ উদ্ভিদ এনে বলধা গার্ডেনে রোপন করেন। বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ গাছ বেষ্টিত সেই উদ্ভিদ উদ্যানই আজকের বলধা গার্ডেন।
বলধা গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ নীল, লাল, সাদা, হলুদ জাতের শাপলায় ভরা বেশ কয়েকটি শাপলা হাউজ।
এছাড়া বিরল প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস, অর্কিড, অ্যানথুরিয়াম, ভূজ্জপত্র, বকুল, ক্যামেলিয়া, অশোক, আফ্রিকান টিউলিপস, আমাজান লিলিসহ নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি রয়েছে এখানে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বলধা গার্ডেনে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এখানে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ আছে, তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে এতে।
এ উদ্যান এক সময় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত গান বাজনার আসর বসতো এখানে। কর্মব্যস্ত জীবনে একটু প্রশান্তি পেতে পরিবার নিয়ে এখানে মানুষ ভিড় করতেন। নির্মল হাওয়ায় নির্জনে প্রাকৃতিক সুধা পান করতেন তারা।

undefined
বলধা গার্ডেন দেখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর বহু রাজা-মহারাজার বাড়িতে কতো রকম ফুলের বাগানই তো দেখলাম। কিন্তু বলধা গার্ডেনের মতো বাগান কোথাও দেখিনি। ’
তবে ফুল ও উদ্ভিদের জাদুঘর খ্যাত বলধা গার্ডেনের সেই পরিবেশ এখন আর নেই।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন এ পার্কে প্রতিনিয়ত চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। পার্কটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আখড়ায়।
কোনো ভদ্র, রুচিশীল মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন আর পার্কটিতে আসতে চান না। তাই উদ্যানটির সংরক্ষণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
এমএ/এএসআর