ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু আরও বড় আকারে হওয়ার শঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
ডেঙ্গু আরও বড় আকারে হওয়ার শঙ্কা ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকা: ভবিষ্যতে ডেঙ্গু বড় আকারে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদি না আমরা এখনই শক্তিশালী এবং সমন্বিত পদক্ষেপ না নেই; বলেছেন গোলটেবিল বৈঠকের বক্তারা।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ডেঙ্গু বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে এডিসের প্রজনন হার অনেকটাই বেশি। কাজেই আমরা যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে এই সময়ের আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করতে হবে। কিন্তু আমরা সময়মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারিনি। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ রয়েছে। তবে এ বছর আমরা ডেন-২ এবং ডেন-৩ সেরোটাইপটা বেশি পেয়েছি। ইতোমধ্যে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেছে, তবে ডেঙ্গু শনাক্ত এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে প্রায় সমান হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি রোগী, এখন প্রায় সমান হয়ে গেছে।

গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে একটা মৃত্যুই আমরা প্রত্যাশা করি না। যার একমাত্র আয়-রোজগারের মানুষটি মারা যায়, তারাই একমাত্র ভয়াবহতাটা বুঝতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করছি, কিন্তু আমাদেরও যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলেই আটকে আছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের কী কী করতে হবে আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি না। এখানেই হচ্ছে আমাদের মূল সমস্যা। ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের মিটিং-সেমিনার করেছি, কিন্তু মিটিং করলে কী হবে? আমি এখন পর্যন্ত জানি না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো ধরনের টাস্কফোর্স কমিটি হয়েছে কি না। আমরা বলেছি, আপনারা ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের যুক্ত করেন, কারণ ডেঙ্গুতে প্রতিদিনই ডাবল ডিজিটে লোক মারা যাচ্ছে। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেখিনি। অথচ আমরা সবাই বিচ্ছিন্নভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি।

ডা. আলমগীর আরও বলেন, ডেঙ্গুতে ১৫০০ জনের অধিক মানুষ মারা গেল, প্রতিদিন ডাবল ডিজিটের মানুষ মারা গেল, অথচ সেটা নিয়ে আমরা কোনদিন ইমারজেন্সি একটা মিটিং ডাকিনি। এসব বিষয় আমাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা সবাই সমালোচনা করতে পারি এটা হচ্ছে না, ওটা হচ্ছে না। আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো হিউম্যান রিসোর্স। আমাদের যে হারে রোগী বেড়েছে, সেই অনুপাতে আমাদের তো হাসপাতালগুলোতে জনবল নেই।

তিনি বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও আমি আশাবাদী। কিছু বিষয়ে আমরা হতাশ হই। এই যে আমরা এতকিছু করছি, আমাদের চিকিৎসকরা রাতদিন কাজ করছেন, তারপরও ভালো ফলাফল আসছে না। এখনও সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী করণীয় সেটি নিয়ে মাইকিং করতে হচ্ছে, পত্রিকা-টেলিভিশনগুলোতে বিনামূল্যে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। এরপরও তো কোনো কাজে আসছে না। কোভিডের সময় মাস্ক পড়ার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে, তারপরও আমরা পারিনি।

সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, আমরা আমাদের স্বভাব পরিবর্তনের চেষ্টাও করি না। একটা এডিস ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে, তাই যদি হয়, তাহলে কি শুধু আমি পরিষ্কার থাকলেই হবে? আমার অফিসের আশেপাশে অনেকগুলো ভাঙা গাড়ি পড়ে আছে, সেগুলোতে পানি জমে থাকে, সেগুলোর দায়িত্ব কে নেবে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, শুধু রোগী দেখার দায়িত্ব আমাদের, আবার কেউ বলছে টিকা আসলেই সমস্যার সমাধান হবে। তাহলে কি টিকা না আসা পর্যন্ত আমরা বসে থাকব? আগামী দিনে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অ্যাক্টিভ অন্তত ২০০ জনের বেশি রোগতত্ত্ববিদ আছে, আমরা কতজনকে কাজে লাগাতে পারছি? কোভিডে একটা পরামর্শ কমিটি করেছিলাম, কিন্তু ডেঙ্গুতে এত মানুষের আক্রান্ত ও মৃত্যু হওয়ার পরও আমাদের কোনো পরামর্শক কমিটি করতে পারিনি। সতর্কতা এবং রোগতত্ত্বের মানুষ হিসেবে আমরা বলতে চাই, আজকের এই ফোরাম বলতে চায়, ডেঙ্গু বড় আকারে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদি না আমরা এখনি শক্তিশালী এবং বড় আকারের কার্যকরী পদক্ষেপ না নেই।

গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন এপিডেমিওলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে কীটতত্ত্ববিদ, সিনিয়র সাংবাদিক, সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।