ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পদ্মা সেতু স্বাস্থ্যকেন্দ্র: বেতন বন্ধ কর্মীদের

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
পদ্মা সেতু স্বাস্থ্যকেন্দ্র: বেতন বন্ধ কর্মীদের

মাদারীপুর: পদ্মা সেতুর পুনর্বাসনকেন্দ্রের পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে গত জুলাই মাস থেকে। একই সঙ্গে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ওষুধও।

 

ফলে পদ্মা সেতুর পুনর্বাসনকেন্দ্রসহ পদ্মার তীরবর্তী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

এরই মধ্যে বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধের খবরে হতাশা প্রকাশ করছেন এ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত জুলাই মাস থেকে কোনো বেতন পাচ্ছেন না তারা। সর্ব শেষ জুন মাসে বেতন পেয়েছেন। এদিকে প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হতো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। চলতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হলেও অক্টোবর মাস থেকে ওষুধ দেওয়াও বন্ধ থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এদিকে তিন মাস ধরে বেতন বন্ধ থাকায় পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৪৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী বর্তমানে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। রয়েছেন চাকরি নিয়ে সংশয়ে। এর মধ্যে অনেকের সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সও পার হয়ে গেছে। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তারা।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাখরেরকান্দি, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব ও পশ্চিম নাওডোবা, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া ও কুমারভোগ পুনর্বাসনকেন্দ্রে মোট পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।  

সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে সর্বশেষ ‘সমাহার’ নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও ওষুধ দেওয়া হতো। প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে।

শিবচরের বাখরেরকান্দি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকায় বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল একযোগে পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চালুর আগেই একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার, গার্ডেনার ও নাইটগার্ডসহ মোট নয়টি পদে জনবল নিয়োগ করা হয় একেকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য। চালু হওয়ার পর থেকে পুনর্বাসনকেন্দ্রের লোকজন ছাড়াও পদ্মার চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার নির্ভরযোগ্য স্থানে পরিণত হয় প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৩৫ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে রয়েছে- মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রাথমিকসেবা, ইপিআই টিকা, স্যাটেলাইট, রেফারেল সার্ভিস, স্বাস্থ্য শিক্ষা,  বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া।

শিবচরের বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৬১ হাজার ১৬৪ জন রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৭৯৮ জন, নারী ২৮ হাজার ৬৪৫ জন এবং শিশু রোগী রয়েছে ১৯ হাজার ৭২১ জন।  

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, গর্ভকালীন পরীক্ষাসহ মা ও শিশুরোগের প্রাথমিক সব চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

বাখরেরকান্দি পুনর্বাসনকেন্দ্রের বাসিন্দা সুমি আক্তার বলেন, আমাদের এখানে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। আমরা ছাড়াও পদ্মার চরের মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়। এখন শুনতেছি তিন মাস ধরে ডাক্তার, নার্সসহ যারা এখানে চাকরি করেন, তাদের বেতন বন্ধ। বিনামূল্যের ওষুধ বন্ধ করে দিছে। বর্তমান সরকারের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সরকারি করে সেবার মান আরও বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।

বাখরেরকান্দি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকায় স্থাপিত পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইউনিয়ন সাব সেন্টার হিসেবে সেবা কার্যক্রম চালুর জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন সংক্রন্ত একটি চিঠি গত ১৪ জুলাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের ফলে সব কিছু আটকে গেছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। বেতন না পেলেও স্বাস্থ্যসেবা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সর্বশেষ ওষুধ বরাদ্দও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো দেখভালের জন্য সেতু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) সমাহারের অ্যাডমিন মো. মাহবুব আলম বলেন, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চালু হলে অন্য একটি এনজিও প্রথমে পরিচালনা করতো। ২০২০ সাল থেকে আমরা পরিচালনা করেছি। প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এখন সেতু বিভাগ দেখভাল করবে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রিক (রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার) ও সমাহার নামে দুটি এনজিও এ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছিল। তাদের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের চুক্তির মেয়াদ গত ৩০ জুনে শেষ হলেও তা আর নবায়ন করার সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।