মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে নেই প্রয়োজনীয় জনবল। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), সহকারী সার্জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফী), স্বাস্থ্য সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ মোট ৩৭টি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
রোগীদের কেউ চর্ম, কেউ মেডিসিন, কেউ গাইনি, কেউ চক্ষু, কেউ নাক-কান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে আসলেও চর্ম, মেডিসিন, গাইনিসহ অন্যান্য বিষয়ে চিকিৎসক (কনসালটেন্ট) না থাকায় তারা ভোগান্তিতে পড়েন। এ হাসপাতালে কনসালটেন্ট পদে ৬টি পদ শূন্য থাকার কারণে উপজেলোর ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দাদের অনেকেই প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ ছুটছেন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে বা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন, অন্তঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ জনের অধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন এবং জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে শতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় সেবা দিতে ডাক্তার ও নার্সরা যেভাবে হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি সাধারণ রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছয়টি কনসালটেন্ট পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলোজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক-কান), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), মেডিকেল অফিসার পদে শূন্য রয়েছে ৫টি, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, সহকারী সার্জন পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে শূন্য রয়েছে ৭টি, ফার্মাসিস্ট পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদে শূন্য রয়েছে ১টি, পরিসংখ্যানবিদ পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কার্ডিওগ্রাফার পদে শূন্য রয়েছে ১টি, কম্পিউটার অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, স্বাস্থ্য সহকারী পদে শূন্য রয়েছে ৪টি, হেলথ এডুকেটর পদে শূন্য রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদে শূন্য রয়েছে ২টি, ওয়ার্ড বয় পদে শূন্য রয়েছে ২টি, আয়া পদে শূন্য রয়েছে ১টি, বাবুর্চি পদে শূন্য রয়েছে ১টি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। যার কারণে গত ১৮ বছর ধরে এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং ইসিজি মেশিনটি অকেজো পড়ে আছে।
এছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ৪জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দিয়ে ইমার্জেন্সি ডিউটি করানো হয়। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা। বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা ও সব ধরনের সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। রোগীকে ভালো করে দেখার আগেই সদর হাসপাতালে রেফার্ড করে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের বিষয়টি আমার জানা আছে। এ বিষয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠিয়ে শূন্যপদের চাহিদা জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি মন্ত্রণালয় দ্রুতই শূন্যপদ পূরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সারাদেশে দ্রুত চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রদান করা হবে। আমরা আশাবাদী ডাক্তার, নার্স, টেকনেশিয়ান, সনোলজিস্ট, আয়া, ওয়ার্ডবয়সহ শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব শূন্য পদইআগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব হবে।
সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৫
বিবিবি/জেএইচ