ঢাকা: বন্ধ্যত্ব মানেই একটি পরিবারের কান্না নয়; এটি একটি সামাজিক সমস্যা। এটি যেমন একটি বড় সমস্যা, তেমনি নানা রকম উপায়ে নিরাময়ও করা যায়।
বন্ধ্যত্বের ধরন
প্রাইমারি (Primary) : যে দম্পতি কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারেনি।
সেকেন্ডারি (Secondary) : যে দম্পতি ন্যূনতম একবার সন্তানসম্ভাবনা হয়েছিলেন।
একজন স্ত্রীর একটি ঋতু সাইকেলে ২০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে গর্ভবতী হওয়ার। গর্ভবতী হওয়ার শারীরিক ঘটনাগুলো হলো—
১. Ovulation : ডিম্ব নিঃসরণ
২. Fertilization : স্বামী ও স্ত্রীর ডিমের নিষিক্তকরণ
৩. Implantation : নিষিক্ত ভ্রূণ জরায়ুতে গিয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নেওয়া।
যেকোনো সমস্যা যদি ওপরের তিনটি পদ্ধতিকে বাধা দেয় তাহলেই Infertility বা বন্ধ্যত্ব হয়ে থাকে।
বন্ধ্যত্বের কারণ
১. পুরুষ (৩০-৪০%)
২. নারী (৪০-৫৫%)
৩. পুরুষ ও নারী উভয়ই (১০%)
৪. ব্যাখ্যাতীত (১০%)।
পুরুষের বন্ধ্যত্ব হতে পারে নানা কারণে। এর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা, উত্থানজনিত কর্মহীনতা, পুরুষত্বহীনতা, বীর্যপাতে ব্যর্থতা, ভ্যারিকোসিল, শুক্রাণুর সংখ্যা কম বা অনুপস্থিত, শুক্রাণুর ক্ষতি, অ্যালকোহল ব্যবহার, ডায়াবেটিসের মতো কিছু রোগ, অটোইমিউন রোগ, সংক্রমণ এবং ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোমের মতো জিনগত ব্যাধি।
ঝুঁকির কারণ (Risk factors)
১. বয়স (৩০ বা ৪০ বছরের বেশি)
২. বিকিরণ বা কেমোথেরাপি
৩. যৌন সংক্রমণ (STI)
৪. ক্রনিক কন্ডিশন অ্যান্ড ডিজিজ
৫. অতিরিক্ত ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন
৬. রাসায়নিক ও কীটনাশকের মতো পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ
৭. স্থূলতা বা কম ওজন
৮. অতিরিক্ত ব্যায়াম
৯. হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা।
বার্ধক্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ, যা নারীদের প্রজননক্ষমতা হ্রাস করে। ৩৫ বছর বয়সের পর প্রায় ৩৩ শতাংশ দম্পতির প্রজনন সমস্যা দেখা দেয়।
বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা (Infertility Treatment)
বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর, সময়সাপেক্ষ, ক্লান্তিকর ও ব্যয়বহুল হতে পারে, যার সাফল্যের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অনেকের জন্য বন্ধ্যত্বের অভিজ্ঞতা একাধিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি থেকে শুরু করে ক্রমে আরো আক্রমণাত্মক চিকিৎসার বিকল্প পর্যন্ত হতে পারে।
অনেক নারী বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার সময় তীব্র চাপ, বিষণ্নতা বা উদ্বেগ অনুভব করেন।
চিকিৎসকরা উভয় সঙ্গীর চিকিৎসা এবং যৌন ইতিহাস সংগ্রহ করে চিকিৎসা শুরু করবেন। প্রাথমিক মূল্যায়নে সাধারণত বীর্য বিশ্লেষণ, টিউবাল মূল্যায়ন এবং ডিম্বাশয়ের রিজার্ভ পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা ওষুধ, অস্ত্রোপচার, অন্তঃসত্ত্বা গর্ভধারণ (IUI) অথবা সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি (ART) দিয়ে দম্পতির পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য কারণের ওপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে।
IUI হলো একটি প্রজনন চিকিৎসা, যেখানে ধোয়া ও ঘনীভূত শুক্রাণু সরাসরি একটি পাতলা ক্যাথেটার ব্যবহার করে নারীদের জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
ART পদ্ধতিতে একজন নারীর ডিম্বাশয় থেকে সুই ব্যবহার করে পরিপক্ব ডিম্বাণু অপসারণ করা হয়, পরীক্ষাগারে শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণু একত্র করা হয় এবং ভ্রূণগুলোকে নারীর শরীরে ফিরিয়ে আনা হয়।
ART-র প্রকারভেদ
প্রধান ধরনের ART হলো ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF), যার অর্থ শরীরের বাইরে নিষেক। এটি ART-র সবচেয়ে কার্যকর ও সাধারণ রূপ।
ইন্ট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন (ICSI) হলো এক ধরনের IVF, যা প্রায়ই পুরুষ বন্ধ্যত্বের দম্পতিদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ICSI হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একক শুক্রাণু একটি পরিপক্ব ডিম্বাণুতে ইনজেক্ট করা হয়।
HOPE INFERTILITY CENTRE-এ এক ধাপে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
১. বন্ধ্যত্ব দম্পতিদের মূল্যায়ন এবং সম্পূর্ণ রোগ নির্ণয়ের কাজ
২. ফলিকুলার স্টিমুলেশন এবং ডিম্বাশয়ের প্ররোচনার মতো বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
৩. সুপার-ওভুলেশন (SO) ও ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI)
৪. পুরুষ বন্ধ্যত্বের ব্যবস্থাপনা
ক. ICSI খ. PESA গ. TESA ঘ. MESAঙ. ইলেকট্রো-ইজাকুলেশন প্রোগ্রাম
৫. ART-র সম্পূর্ণ পরিসর—ক. IVF খ. ICSI গ. IVM ঘ. ব্লাস্টোসিস্ট কালচার
৬. ভ্রূণ, ওসাইট ও শুক্রাণুর ক্রায়োপ্রিজারভেশন
৭. বন্ধ্যত্ব দম্পতির কাউন্সেলিং।