ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বামরুনগ্রাদে বাংলাদেশি রোগীতে ভাটার টান

আদনান রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:২৫, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৪
বামরুনগ্রাদে বাংলাদেশি রোগীতে ভাটার টান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে ফিরেঃ চিকিৎসাসেবার তুলনায় খরচের পাল্লা অনেক ভারী। অনেকেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে খরচের বহর দেখে বিপাকে পড়ছেন।

আর সে কারণে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভাটা পড়েছে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যায়। খসড়া হিসেবে, গত সাত বছরে এই সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

হাসপাতালটির ইন-পেশেন্ট বিভাগ (আইপিডি) থেকে এ-তথ্য জানা গেছে।  

বামরুনগ্রাদে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কয়েকজন বাংলাদেশির বক্তব্যেও এর সত্যতা মিলেছে। তাদের দাবি, গত কয়েকবছরে ডায়াগনস্টিক টেস্ট, নার্সিংসহ ঔষধপত্রের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমছে।

undefined



তবে বামরুনগ্রাদ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, বাংলাদেশে উন্নত মানের কিছু হাসপাতাল গড়ে ওঠার কারণে আগের তুলনায় হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমেছে।
 
বামরুনগ্রাদের কাছে পাওয়া একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৭ সালে হাসপাতালটিতে সবসময়ই গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন বাংলাদেশি ভর্তি থাকতেন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা কমে ১০ থেকে ১৫ জনে নেমে এসেছে।

undefined


 
হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, আগে বামরুনগ্রাদের প্রতিটি ফ্লোরে হাঁটলেই বাংলাদেশিদের দেখা মিলতো। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না।
 
হেলাল উদ্দিন নামে হাসপাতালের ভর্তি এক বাংলাদেশি রোগীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “কয়েক বছর আগেও বামরুনগ্রাদের খরচ প্রায় বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর সমানই ছিল। তখন অনেকেই ভিসা নিয়ে এই দেশে চিকিৎসার জন্য আসতেন। এখন খরচের বহর এতো বেড়েছে যে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে।

undefined



গত ৫/৭ বছরে  চিকিৎসার খরচ দিগুণেরও বেশি হয়েছে জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ঔষধপত্রও অনেক ব্যয়বহুল।

তবে চিকিৎসকদের পেশাদারি আচরণ ও নার্সিংয়ের উন্নত মানের কারণে এখনও অনেকেই বামরুনগ্রাদে চিকিৎসা নিতে যান উল্লেখ করে হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি নিজেও ওই কারণে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।  

undefined


 
বামরুনগ্রাদে ঘুরে ঘুরে জানা গেলো রোগীদের প্রথম খরচটি শুরু হয় ডাক্তারের কাউন্সেলিং ফি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। যে কোনো বিভাগের চিকিৎসক এই বাবদ রোগীর কাছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার বাথ পর্যন্ত (২৬০০ থেকে ৫২০০ টাকা) নিচ্ছেন।
 
এর পরপরই আসে ডায়াগনস্টিক টেস্ট। বামরুনগ্রাদে বাংলাদেশি কোনো রোগী গেলে তার চিকিৎসা আবার গোড়া থেকে শুরু হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় না বাংলাদেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর টেস্টের কোন ফলাফল। ফলে সে খাতে চলে যায় একটি বড় অংকের অর্থ।

undefined


 
বামরুনগ্রাদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন সেন্টারে করা ডায়াগনস্টিক টেস্টের ফল তিনরকম দেখায়। এ কারণে বাংলাদেশি সেন্টারগুলোর টেস্টে ভরসা রাখা যায় না। এজন্যই রোগীদের নতুন করে টেস্ট করতে বলা হয়। আর এই নতুন করে টেস্টেই চলে যায় একটি বড় অংকের টাকা।
 
মানবদেহের প্রতিটি জটিল রোগসহ সম্পূর্ণ শরীর চেক-আপের ‘কম্প্রিহেনসিভ প্রোগ্রামের’ খরচ বামরুনগ্রাদে ৪৮ হাজার টাকা। বাংলাদেশের প্রথম সারির হাসপাতালগুলোতে এই বাবদ খরচের পরিমাণ ১২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা।

undefined


 
এর ওপর রয়েছে ওষুধের খরচ। বামরুনগ্রাদে বাংলাদেশি রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের ঔষধগুলোর প্রায় সবই থাইল্যান্ডের স্থানীয় এবং ব্যয়বহুল। তাদের দেওয়া ওষূধগুলোই নিতে হয়। ফলে অর্থ বেশি লাগে। আবার একবার শেষ হলে আবারো অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঔষধ আনতে হয় বাংলাদেশিদের।
 
কর্তৃপক্ষের দাবি, ঔষধের গুণগত মান বজায় রাখতে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। থাইল্যান্ডের প্রতিটি ফার্মেসী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, এখানকার ঔষধও মানসম্পন্ন। তাই ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসকরা এগুলোই গ্রহণের পরামর্শ দেন।

undefined


 
এসব বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বামরুনগ্রাদের বাংলাদেশি প্রতিনিধি এম.এ. হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “হাসপাতালটি নিয়ম-শৃঙ্খলার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। ধনী-গরিব কাউকে বিলের উপর কোনও প্রকার ছাড় দেওয়া হয় না।
 
খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কথা মানতে নারাজ বামরুনগ্রাদ কর্তৃপক্ষ।

তদের মতে, বাংলাদেশের কয়েকটি প্রথম সারির হাসপাতাল রোগীদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করেছে, তাই বাংলাদেশিরা দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
 
হাসপাতালটির কর্তা ব্যক্তিদের একজন বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, এশিয়ার হাসপাতালগুলো বাংলাদেশিদের কাছে ব্যয়বহুল হওয়ার কারণ দেশগুলোর অর্থের মানের ভিন্নতা। বামরুনগ্রাদে একটি ডায়াগনস্টিক টেস্টের ফি ১ হাজার বাথ হলে এটা বাঙালিদের জন্য আড়াই হাজার টাকা। ওই অংক থাইল্যান্ডের মানুষের কাছে ১ হাজার টাকার মতোই।
 
চিকিৎসা ছাড়াও রোগীদের স্বজনদের থাকার খরচের কারণেও অনেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। হাসপাতালটিকে কেন্দ্র করে ব্যাংককের সুকুম্ভিটের প্রায় সবক’টি স্ট্রিটেই হোটেল খরচ বেশি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা।
 
হাসপাতালটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রেস্টুরেন্টেগুলোতে খাবারের দামও তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশি খাবার পাওয়া গেলেও তা দামে চড়া বলে জানান অনেকেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬,  ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।