ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, বিজেপির হরতালে গুলি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৪
উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, বিজেপির হরতালে গুলি

কলকাতা: আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ। বুধবার (২৮ আগস্ট) বিজেপির হরতালে চলেছে গুলি।

হরতালের দিনেই ছিল শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সমাবেশ। সেখানে মমতা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ফের দাবি করেন, সব চক্রান্ত চলছে। অপরদিকে, সমাবেশের ঠিক দুই কিলোমিটার দূরে আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিচারের দাবিতে মিছিল বের করেন।

ছাত্রদের দাবি, একদল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে, শাসক নিজেদের আসন আগলে রাখতে অসম্ভব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আমরা কোনোটা চাই না। আমরা রাজনীতি চাইছি না। আমরা দুই দলকে (বিজেপি-তৃণমূল) বলব, আমাদের বিচার চাই। আমরা জানি, এর জেরে রোগীদের চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা দুই দিকই ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদেরও নিরাপত্তা দেখতে হবে। আমরা সুরক্ষা না পেলে চিকিৎসা করব কী করে? যতদিন বিচার না পাব, অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হবে, ততদিন এসব চলবে।

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা শহর। রক্তাক্ত হন শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা। চলে পুলিশের অবিরাম লাঠিচার্জ, জলকামান, টিয়ারগ্যাস। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের আন্দোলনে সমর্থন দেয় সাধারণ রাজ্যবাসী ও বিজেপি। বামেরা প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে পিছিয়ে আসে।

এরপরই বুধবার ১২ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছিল বিজেপি। এ দিন হরতালের সমর্থনে বিজেপির একাধিক কর্মসূচি শুরু করতেই পদক্ষেপ নেয় কলকাতা পুলিশ। বিজেপির সমর্থকরা হরতালের সমর্থনে পথে নামতেই ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় কর্মী-সমর্থকদের।  

পশ্চিমবঙ্গ সরকার হরতালের বিরোধিতা করে সবকিছু সচল রাখতে সকলকে আবদেন জানায়। তবু এ দিন কলকাতার পথেঘাটে সাধারণ মানুষের সংখ্যা ছিল কম। অশান্তি ভয়ে বন্ধ স্কুল কলেজগুলো। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল কলকাতায়। তবে পার্শ্ববর্তী একাধিক জেলা থেকে বিভিন্ন অশান্তির খবর সামনে আসতে থাকে। মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল ও বিজেপি।

বিজেপির ডাকা হরতালে বিজেপির দুই নেতার গাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ করেন উত্তর ২৪ পরগণার বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। তার অভিযোগ, দুই বিজেপি নেতার গাড়িতে অন্তত ছয় রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে। তাতে জখম হয়েছেন তিনজন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

অর্জুন সিংহের দাবি, হারতাল বানচাল করার জন্য পুলিশের সামনেই গুলি চালায় শাসকদলের সমর্থকরা। এমন অশান্তির ঘটনার খবর জেলার আরও নানান জায়গা থেকেও এসেছে।

এমনই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই শাসক দলের ছাত্র সমাবেশ ছিল। সেখানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার ভাতিজা তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেছেন, ওরা বাংলাদেশ করার চক্রান্ত করছে। চেয়ার দখলের লড়াই করছ? ক্ষমতা থাকলে ভোটে যাও। আমরা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছি।

একই সঙ্গে মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকেও জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল রয়েছে। আমার তাদের প্রতি সমর্থন ছিল, আছে, থাকবে। তবে আমি বলব, আপনারা তো মানবিক। অনেক গরিব লোক চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছে। গরিবেরা কোথায় যাবে? আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আন্দোলন করেছেন কিন্তু আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিইনি, কোনো ব্যবস্থা নেব না। কিন্তু এবার আস্তে আস্তে কাজে যোগদান করুন। আমি কোনো পদক্ষেপ নিতে চাই না।

দিনভর এমন নানা উত্তাপের মধ্যে বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী ফের ঘোষণা দিলেন, রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্ন, পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজার এবং মমতার বাসভবন কালীঘাট ঘেরাও কর্মসূচি নেওয়া হবে খুব শিগগিরই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।