ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

নারীশক্তি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ: পলক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
নারীশক্তি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ: পলক

নাটোর: ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, একটা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্ধেক শক্তি দিয়ে কাজ করলে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করলেই সেই দেশ ও জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই দেশের নারীশক্তিকে প্রযুক্তির সমন্বয়ে আগামী ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) কাজ করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে নাটোরের সিংড়ায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন হার পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ৫৮০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৯ হাজারের বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন করে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। বিগত ১৫ বছরে সারা বাংলাদেশে ধাপে ধাপে তরুণ তরুণীদের দক্ষ মানব সম্পদে এবং স্বাধীন পেশায় সফলভাবে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত উদ্যোক্তা সংস্কৃতির বিকাশ এবং তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রথমে ‘সি পাওয়ার’ নামে একটা পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সাড়ে ১০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা খুশি হয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেন এবং নিজেই নামকরণ করেন ‘হার পাওয়ার’।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এই ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৩০টি উপজেলায় নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে নারী ফ্রিল্যান্সার, নারী আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার, নারী ই-কমার্স ও নারী কল সেন্টার এজেন্ট এই চারটি বিষয়ে মোট ২৫ হাজার ১২৫ জন নারীকে ৫ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণসহ এক মাসের মেন্টরশিপ দেওয়া হবে। যেসব প্রশিক্ষণার্থী সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করবেন, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাদের একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হবে।

পলক বলেন, প্রশিক্ষণার্থীরা যদি উদ্যোক্তা হতে চায় তবে তাদের জন্য স্টার্ট-আপ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি বিনিয়োগ করা হবে। তবে এ জন্য তাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের প্রতিটা নাগরিককে অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।  

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে ক্যাশলেস, সরকারি সেবা ব্যবস্থাকে পেপারলেস, ফেইসলেস, কানেক্টেড ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট সরকার ব্যবস্থায় কাজ করা হচ্ছে।

পলক আরও বলেন, সারা দেশে যত ডাকঘর আছে, সেই ডাকঘরগুলোকে উন্নত, আধুনিক, স্মার্ট ডাকঘরে পরিণত করা হবে।  বাংলাদেশের কোনো উৎপাদিত পণ্য স্মার্ট ডাকঘরের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা যেন ৩০ লাখ প্রবাসী বাঙালির কাছে পাঠাতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি ডাকঘরকে স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট হিসেবে পাইলট প্রকল্প শুরু করব এবং মে মাসের মধ্যে আমরা দেশের ৫০০টি ডাকঘরকে স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্টে পরিণত করা হবে। বাংলাদেশে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের আদান-প্রদান, আর্থিক লেনদেন সহজ ও স্মার্টভাবে করতে পারেন, সেজন্য ডাক অধিদপ্তরের সব কার্যক্রমকে পর্যায়ক্রমে স্মার্ট ডাকঘরে পরিণত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নির্ধারণ করেছেন। একইভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষিত নারী মেম্বার, কাউন্সিলর ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপিকে মহান জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী এমপিকে মহান জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচন করে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা নির্ধারণ করে বৈপ্লবিক এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এভাবেই অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটা দেশ ও জাতি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের প্রতিটা নাগরিককে আমরা অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, উদ্ভাবনী, সৃজনশীল স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের অর্থনীতিকে ক্যাশলেস ও ইন্টার অপারেবল স্মার্ট অর্থনীতিতে পরিণত করতে চাই। সরকারি সেবা ব্যবস্থাকে পেপারলেস, ফেইসলেস, কানেক্টেড ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট সরকার ব্যবস্থায় পরিণত করতে চাই। বাংলাদেশের শহর-গ্রামের দূরত্ব দূর করে, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করে, নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিকরূপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ওয়ালীউল হাসান, সিংড়া পৌরসভার মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) মো. আক্তারুজ্জামান, টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগম, শেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেল প্রমুখ।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হার পাওয়ার প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) রায়হানা ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।