ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যারা মনে করে, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ ভুয়া, সাজানো নাটক’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
যারা মনে করে, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ ভুয়া, সাজানো নাটক’ একটি ভুয়া পোস্টে দাবি করা হয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মাক্সিম ডোনেটস (বামে) আসলে ‘নকল জেলেনস্কি’

ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের প্রথম বার্ষিকীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই যুদ্ধ নিয়ে অনেক মিথ্যে দাবি আবার বাড়ছে। এসব পোস্টের কোনো কোনোটিতে লাখ লাখ মানুষ লাইক দিচ্ছে, শেয়ার করছে।

খবর বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু ডানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, যেগুলোর রয়েছে অনেক ফলোয়ার, একের পর এক মিথ্যে দাবি সংবলিত পোস্ট দিচ্ছে। এসব পোস্টে এমন ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে, পুরো ইউক্রেন যুদ্ধই আসলে পশ্চিমা গণমাধ্যম আর বিভিন্ন সরকারের সাজানো ধাপ্পাবাজি।

এ ধরনের দাবি সংবলিত ভাইরাল পোস্টগুলো যাদের, তাদের অনেককে এর আগে টুইটারে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ইলন মাস্ক টুইটারের মালিকানা নেওয়ার পর এরা আবার এই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ফিরে এসেছে।

টুইটার এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে একটি মিথ্যে দাবি বেশ ছড়াচ্ছে, যাতে বলা হচ্ছে, এই পুরো যুদ্ধটাই আসলে ভুয়া, এ রকম কোনো যুদ্ধ আসলে চলছে না।

এর প্রমাণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পরিচিত ডানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কেন যুদ্ধ ক্ষেত্রের লড়াইয়ের যথেষ্ট ফুটেজ গণমাধ্যমে নেই।

এরকম একটি ভাইরাল পোস্টে একজন মন্তব্যকারী অভিযোগ করছেন, এই যে ‘যুদ্ধের কোনো ফুটেজ’ নেই, তা থেকে বোঝা যায়, এটি আসলে ধাপ্পাবাজি।  

টুইটারে প্রায় ১৪ লাখ ফলোয়ার রয়েছে সেরকম একজন দাবি করছেন, এই যুদ্ধের কোনো ফুটেজ নেই’ এবং যুদ্ধের কোনো বিস্তারিত সংবাদও কোথাও নেই।

এই পোস্ট আবার শেয়ার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। তিনি আবার মন্তব্য করেছেন-  কেউ বলুক দেখি এই লোক ভুল বলছে? 

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ছাড়াও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের প্রচুর ফুটেজ বিবিসি থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে। এই যুদ্ধের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যে মিথ্যে প্রচার করা হয়েছে, সেগুলোও তারা উন্মোচন করেছে।  

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থাও এই যুদ্ধ যে বাস্তব, তার তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছে। একেবারে শুরু থেকেই এই যুদ্ধের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচারিত হয়েছে। এসব ভিডিও যে আসল, সাংবাদিকরাও তা যাচাই করে দেখতে পেয়েছেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার দুদিন পর কিয়েভের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বহুতল ভবনের ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছিল গোটা বিশ্বে। এতে দেখা যাচ্ছিল ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবনটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর পর সংবাদকর্মীরা সেখানে গিয়ে এই হামলার বিস্তারিত খবর সংগ্রহ করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত এই ভবনটি এরপর মেরামত এবং আংশিকভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এই সংস্কার করা ভবনটির ছবি গত কদিন ধরে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এই ছবি দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটিতে আদৌ কোনো হামলা হয়নি, অথবা পুরো যুদ্ধটাই আসলে একটি ধাপ্পা। কারণ, তাদের যুক্তিতে, একটি চলমান যুদ্ধের মধ্যে একটি ভবন এভাবে মেরামত করা অসম্ভব।

এই মিথ্যে দাবি যারা জোরেশোরে চালাচ্ছিল, তাদের একজন ছিলেন একজন দক্ষিণপন্থী পডকাস্টার এবং টিকা-বিরোধী প্রচারণায় তৎপর এক ব্যক্তি। এর টুইটার একাউন্টটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি সম্প্রতি আবার সচল করা হয়েছে।

আর কিয়েভে যদিও নিয়মিত রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, এটি গত বছরের মার্চের পর আর সম্মুখ রণক্ষেত্র ছিল না। কারণ রুশ বাহিনী কিয়েভ এবং এর আশে-পাশের এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল পূর্ব ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য।

একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল গত বছরের মে মাসে, এবং ইউক্রেনীয় গণমাধ্যমে গত গ্রীষ্মে এবং শরতকালে এর খবর ছবিসহ বিস্তারিত প্রচারিত হয়েছে।

গত কদিনে একটি ভিডিও দেখেছেন লাখ লাখ মানুষ। এতে দেখা যায়, একজন সংবাদকর্মী কালো ব্যাগে ভরা সারি সারি মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে, তার পেছনে চোখে পড়ে একটি মৃতদেহ ‘নড়ছে’।

এই ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হয়, ভাড়া করা লোকজন এনে তাদের ‘মরদেহ’ সাজিয়ে এই দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে পশ্চিমাদের দাবির সমর্থনে।

এই ভিডিও দেখিয়ে একটি দক্ষিণপন্থী টুইটার একাউন্টে লেখা হয়, নড়াচড়া বন্ধ কর- তোমার না মৃত থাকার কথা? এটা কি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ? 

এই একই ভিডিও এধরনের দাবি জানিয়ে আরও অনেক দক্ষিণপন্থী ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয়েছে।

এই ভিডিওটি আসলে নেওয়া হয়েছে একটি অস্ট্রিয়ান সংবাদপত্র ওস্টেরিখের এক রিপোর্ট থেকে। গত বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভিয়েনায় জলবায়ুর পরিবর্তন ইস্যুতে একটি বিক্ষোভ হয়েছিল। তখনও ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হয়নি।  

ওই বিক্ষোভে পরিবেশবাদীরা জলবায়ুর পরিবর্তন এবং কার্বন নির্গমনের কী প্রভাব মানবজীবনের ওপর পড়বে, তা তুলে ধরতে এভাবে মরার অভিনয় করেছিলেন।

এই ভিডিও নিয়ে মিথ্যাচার এটিই প্রথম নয়। এর আগে এই একই ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হয়েছিল, কোভিডে মৃত্যুর যেসব দাবি করা হয়, তা ভুয়া।

অনলাইনে শেয়ার করা কিছু ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হয়েছে। এগুলোতে নাকি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মতো দেখতে একজন ‘নকল জেলেনস্কি’কে ব্যবহারের বিষয়টি ‘দুর্ঘটনাবশত’ ফাঁস হয়ে গেছে, এমন দাবি করা হচ্ছে।

লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে এমন এক পোস্টে বলা হয়, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মতো হুবহু দেখতে একজন গোপন ব্যক্তি আছেন , ভুলক্রমে পোলিশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক ফুটেজে তাকে দেখা যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্টের মতো একই রকম পোশাক পরে আছেন।

অন্যান্য পোস্টেও এই একই ব্যক্তিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরের সময় পেছনে দেখা যাচ্ছে।

তবে যে ব্যক্তিকে নিয়ে এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তিনি আসলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, মাক্সিম ডোনেটস। রয়টার্স জানাচ্ছে, মি. ডোনেটস ২০১৯ সাল হতে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা টিমের প্রধান।

অনলাইনে অনেক ছবিতেই তাকে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।