ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হামাস কারা, কেন ইসরায়েলে হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
হামাস কারা, কেন ইসরায়েলে হামলা

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আর ইসরায়েলের সেনাদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় শনিবার ভোরে। হঠাৎই হামলা চালিয়ে বসে হামাস।

জবাবে ইসরায়েলও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।  

ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের সাত শতাধিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি সংগীত উৎসবেই নিহত হয়েছেন ২৫০ জনের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিন বলছে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় প্রায় ৫০০ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে এখন পর্যন্ত।

শনিবারের হামলার পর রোববার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘোষণা দেয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করতে বিমান বহনকারী একটি জাহাজ ইসরায়েলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘ এবং কঠিন যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে। সেখানে স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।

এই হামলার কেন্দ্রে যে হামাস, সেই গোষ্ঠীর পরিচয় কী? 

আল জাজিরা বলছে, হামাসের অর্থ হলো ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন। আরবি ভাষায় এর অর্থ হলো গভীর অনুভূতি বা উদ্যম।

এই গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে গাজা নিয়ন্ত্রণ করে। গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার (১৪১ বর্গমাইল)। এই স্থানে ২০ লাখেরও বেশি লোকের বাস। কিন্তু তারা ইসরায়েলের হাতে অবরুদ্ধ।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনের (পিএলও) প্রধান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত ফাতাহ বাহিনীর বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধের পর হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকায় ক্ষমতায় রয়েছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রথম ইন্তিফাদা শুরুর পর ১৯৮৭ সালের দিকে শেখ আহমেদ ইয়াসিন ও তার সহযোগী আজিজ আল-রানতিসি গাজায় হামাস আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন।
 
আন্দোলনটি মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হিসাবে শুরু হয়েছিল এবং ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড নামে একটি সামরিক শাখা তৈরি করেছিল।

এটি ইসরায়েলি দখলদারত্বের শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচিও চালু করেছিল।

পিএলও থেকে আলাদা, হামাস ইসরায়েলের রাষ্ট্রত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তবে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকার করে।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির নির্বাসিত নেতা খালেদ মেশাল ২০১৭ সালে বলেন, আমরা ফিলিস্তিনের মাটির এক ইঞ্চিও ছাড় দেব না, সাম্প্রতিক চাপ যাই থাকুক না কেন এবং দখল যতই দীর্ঘ হোক না কেন।
 
১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল ও পিএলওর সমঝোতা করা অসলো শান্তি চুক্তির সহিংস বিরোধিতা করে হামাস।

গোষ্ঠীটি তার নিজস্ব সীমানার মধ্যে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও ইসরায়েল উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি সৈন্য, বসতি স্থাপনকারী এবং বেসামরিকদের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অনুসরণ করেছে।
 
গোষ্ঠীটি সম্পূর্ণভাবে বা কিছু ক্ষেত্রে এর সামরিক শাখাকে ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিশর এবং জাপান একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

হামাস একটি আঞ্চলিক জোটের অংশ যার মধ্যে ইরান, সিরিয়া ও লেবাননের গ্রুপ হিজবুল্লাহও রয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতির বিরোধিতা করে।

বিবিসি বলছে, বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠীর মধ্যে হামাস সবচেয়ে বড়।

সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদ প্রায়শই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়। গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সামরিক কার্যকলাপের সমন্বয়কারী জয়েন্ট অপারেশন রুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এরা।
 
শনিবারের হামলা নিয়ে হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল জাজিরাকে বলেন, কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে নৃশংসতার মুখোমুখি হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় গোষ্ঠীটি তাদের সামরিক অভিযান চালিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণ, আমাদের পবিত্র স্থান যেমন আল-আকসার (মসজিদ) বিরুদ্ধে নৃশংসতা বন্ধ করুক। এই সব কিছু এই যুদ্ধ শুরু করার পেছনের কারণ।

হামাস অন্যান্য গোষ্ঠীকেও লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য শনিবারের হামলা মাত্র শুরু।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২৩
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।