ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গণহত্যা থামিয়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ আইসিজের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০
গণহত্যা থামিয়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ আইসিজের

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের প্রতি অবশ্যপালনীয় ৪টি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং রাখাইন রাজ্যে এখন যে রোহিঙ্গারা বাস করছেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।  

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) অন্তর্বর্তী নির্দেশ বিষয়ক এ রায় পড়তে শুরু করেন আইসিজের প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ।

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিনি রায় পড়ে শোনান। আইসিজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সরাসরি এ রায় ঘোষণা সম্প্রচার করা হয়।  

অন্তর্বর্তী ৪ নির্দেশ হলো-
এক. মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সব ধরনের হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা নিরসন করতে হবে। সেই সঙ্গে দূর করতে হবে তাদের যে কোনো রকমের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির আশঙ্কা। নিশ্চিত করতে হবে তাদের অধিকার।  

দুই. দেশটির সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বা যে কেউ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, উস্কানি বা কুকর্মে সহযোগিতার সুযোগ পাবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে।  

তিন. রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ধরনের প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না। সব প্রমাণ অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।   

চার. উপরোক্ত নির্দেশগুলো যথাযথভাবে যে পালিত হচ্ছে, ৪ মাস পর মিয়ানমার সে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইসিজেকে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপর থেকে চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক ৬ মাস অন্তর অন্তর মিয়ানমারকে এ বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সেসব প্রতিবেদন গাম্বিয়াকে দেওয়া হবে। গাম্বিয়া সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে নিজেদের মতামত জানাবে।  

এর গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ৩ দিনব্যাপী নেদারল্যান্ডসের হেগে এ মামলার শুনানি হয়। তাতে মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি অংশ নেন। সে সময় তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়া গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার রাখে না বলেও দাবি করা হয় মিয়ানমারের পক্ষে।  

অন্যদিকে গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আদালতকে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

এদিন শুরুতে ওই শুনানির সূত্রে গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের অবস্থান নিয়ে আদালতের বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। আদালত জানান, গণহত্যা কনভেনশনের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার রাখে।

ডিসেম্বরে মামলার শুনানিতে সু চি বলেন, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির বিরুদ্ধেই মূলত ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযান চালানো হয়। ওই গোষ্ঠী বেশ কিছু সেনা চৌকিতে হামলা চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার প্রতিক্রিয়ায় ওই অভিযান পরিচালিত হয়।  

আদালত মিয়ানমারের এ আত্মপক্ষ সমর্থনের সমালোচনা করে বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমার যে সেনা অভিযান চালায় তাতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। ব্যাপকহারে হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয় বেসামরিক রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ও বেসামরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেনি।  

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার বক্তব্য, এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য ও গণহত্যা কনভেনশনে উল্লেখিত গণহত্যার সংজ্ঞা অনুসারে মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে তা গণহত্যার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে জানান আদালত। মিয়ানমারে এখনও বিভিন্ন ক্যাম্পে ৬ লাখ বিপন্ন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে জানান আদালত।  

আরও বিস্তারিত তদন্ত, সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের আগে আদালত এখনই চূড়ান্ত রায় দেবেন না। এজন্য আরও সময় প্রয়োজন। কিন্তু সার্বিক বিশ্লেষণে রোহিঙ্গারা বিপন্ন প্রতিভাত হওয়ায় তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চূড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে অবশ্যপালনীয় ৪টি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।  

গত বছরের নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিমপ্রধান দেশ গাম্বিয়া।  

এরপর গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর ৩ দিনব্যাপী নেদারল্যান্ডসের হেগে ওই মামলার শুনানি হয়। এতে মিয়ানমারের পক্ষে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি অংশ নেন। সে সময় তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১৭ সালে রাখাইনে সেনা অভিযানকালে কিছু সেনা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন সু চি।

অন্যদিকে গাম্বিয়া মিয়ানমারের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখা যায় না বলে জানায়। তারা রোহিঙ্গা গণহত্যা ও সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অন্তর্বর্তী নির্দেশের দেওয়ার অনুরোধ করে।  

২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘তাতমাদাও’র অভিযানে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২০  
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।