ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্ল্যাকহোল যখন নক্ষত্র গিলে খায়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২০
ব্ল্যাকহোল যখন নক্ষত্র গিলে খায়! টেলিস্কোপের সাহায্যে তোলা টিডিই’র আলোকচিত্র।

প্রতিটি ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি দানবাকার ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর থাকে। সূর্যের চেয়েও কোটি কোটি গুণ ভারী এসব ব্ল্যাকহোল চারপাশ থেকে গ্যাস গ্রাস করতে থাকে। ফলে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকে সেগুলো। এমনকি আস্ত নক্ষত্রও গিলে ফেলার ক্ষমতা রাখে একটি ব্ল্যাকহোল!

কিছু কিছু ব্ল্যাকহোল কয়েক হাজার বছর একেবারে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, যেন অদৃশ্য! তারপর কোনো একদিন একটি নক্ষত্র তার খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় মুহূর্তেই তলিয়ে যায় সেখানে। একটি আস্ত নক্ষত্র বেমালুম গায়েব হয়ে যায় তার ভেতর।

এতে সেটি কয়েক মাস ধরে সুপারনোভার মতো তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে। এ ঘটনাকে বলে টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট (টিডিই)।

কয়েক বছর আগ পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মাত্র কয়েকবার এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে পেরেছেন। বর্তমানে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশাল ক্ষেত্রজুড়ে সার্ভে করা সম্ভব হয়, যার মাধ্যমে সুপ্ত ও প্রায় অদৃশ্য অনেক ব্ল্যাকহোলের সন্ধান মিলেছে। সেই সঙ্গে নক্ষত্র গ্রাস করে ফেলার ভয়ঙ্কর সব আলোকচিত্র তোলা সম্ভব হয়েছে, যা এ ঘটনা সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের গবেষক সুভি গেজারি বলেন, ‘আমরা এখনো এ ঘটনার পেছনের মেকানিজম বুঝতে চেষ্টা করছি। ’ এ মাসের শুরুতে হনলুলুতে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে ৩৯টি টিডিই’র আলোকচিত্র তুলে ধরেন এবং এ নিয়ে ব্যাখ্যা করেন তিনি। ৩৯টির মধ্যে ২২টি ঘটেছে গত কয়েক বছরে এবং ১৭টি ঘটেছে ১৮ মাস আগে জুইকি ট্র্যান্সিয়েন্ট ফ্যাসিলিটির (জেটিএফ) অপারেশন শুরু হওয়ার পর। ক্যালিফোর্নিয়ায় এক দশমিক দুই মিটার সার্ভে টেলিস্কোপের মাধ্যমে জেটিএফের কাজ শুরু হয়।

টিডিই’র আলোকচিত্রগুলোতে দেখা যায়, ব্ল্যাকহোলের তীব্র মধ্যাকর্ষণ বল একটি নক্ষত্রকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলছে। মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ শক্তিতে একটি নক্ষত্রের অর্ধেক গ্রাস করে ফেলে সেটি। সেসময় সেটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ক্রমাগত এক্স-রে নিঃসরণ করতে থাকে।

গ্রাস করার সময় নিঃসরিত গ্যাসের বর্ণালী থেকে অনেক সময় ধারণা করা যায় নক্ষত্রটি কেমন ছিল। গেজারি ও তার সহকর্মীরা গবেষণা করে দেখেন, টিডিই বর্ণালী তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এতে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম বা মিশ্র গ্যাস থাকতে পারে। হাইড্রোজেন থাকলে বোঝা যায় সেটি বেশ বড় ও নতুন নক্ষত্র। হিলিয়াম থাকলে বোঝা যায় সেটি প্রবীণ নক্ষত্র।

কতো দ্রুত একটি নক্ষত্রকে বেমালুম পেটে পুরে নিচ্ছে ব্ল্যাকহোল, তা পরিমাপ করা সম্ভব হলে একসময় ব্ল্যাকহোলের ভর সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা মিলবে। তবে তার আগে এ ঘটনার পেছনের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ভালো করে বুঝতে হবে বলে জানান হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের গবেষক তসভি পিরান।

কয়েকটি টিডিই তুলনা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্ল্যাকহোলের উজ্জ্বলতা ও এক্স-রে নিঃসরণের পরিমাণ আলাদা। পিরান বলেন, ব্যাপারটা এমন যেন নক্ষত্র গিলে খাওয়ার পর বদহজম হয়েছে ব্ল্যাকহোলের! আর সেটি প্রতিক্ষেত্রে ভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

তত্ত্ব অনুসারে, ব্ল্যাকহোলের ভর একশ’ মিলিয়ন সূর্যের ভরের চেয়েও বেশি হতে পারে। তাই নক্ষত্র ছিন্নভিন্ন না করে একেবারেই পুরোটা গ্রাস করার সক্ষমতা থাকার কথা সেটির। কিন্তু তার বদলে নক্ষত্রগুলো ছিন্নভিন্ন হওয়ারই প্রমাণ মিলেছে। তবে এ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা প্রায় সবগুলোই ছিল ছোট ছায়াপথের ব্ল্যাকহোল।

টিডিই’র মাধ্যমে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন সেটি কীভাবে ঘোরে এ সম্পর্কে নতুন তথ্য মিলেছে। ভবিষ্যতে টিডিইকে একক হিসেবে ধরে ব্ল্যাকহোলের ভর ও ধরন বের করাও সম্ভব হতে পারে বলে আশাবাদী জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।