ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জাহান্নামের শাস্তি শুধু উত্তপ্ত আগুন নয়, তীব্র ঠান্ডাও

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
জাহান্নামের শাস্তি শুধু উত্তপ্ত আগুন নয়, তীব্র ঠান্ডাও

জান্নাত ও জাহান্নাম। দুই পথ।

দুই পরিণাম। দুই বাসস্থান। নেককারদের জান্নাতের বিপরীতে অসৎ কর্মশীলদের জন্যে রয়েছে জাহান্নাম।

জাহান্নামের স্তর সাতটি। অন্যায় ও জুলুমের স্তর বিবেচনা করে অপরাধীদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে উপযুক্ত স্থানে।
টেনে নেওয়া হবে মাথার চুল ধরে। পুলসিরাতের ওপর চলতে গিয়ে জাহান্নামিরা একে একে পরতে থাকবে ক্বারার তথা স্বীয় অবস্থানস্থলে। তন্মধ্যে যাদের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান আছে, নির্দিষ্ট পরিমাণে শাস্তি ভোগ করার পর তারা আসবেন জান্নাতে। আর নাস্তিক, মুরতাদ কিংবা অবিশ্বাসীরা অনন্তকালের জন্যে থেকে যাবে ওখানেই। আল্লাহতায়ালা আগুনের থাম দিয়ে তাদের বাসস্থানকে এমনভাবে চারদিক থেকে আবদ্ধ করে দেবেন, যেন তিনি তাদের ভুলে গেছেন। কিন্তু অভ্যন্তরে যথারীতি চলতে থাকবে তাদের কৃতকর্মের ফলাফল।  

জাহান্নামিদের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে কোরআনে কারিমে বারবার বলা হয়েছে- ‘নার’ তথা আগুন। যে আগুনের তীব্রতা গায়ের চামড়া খসিয়ে দেবে পুরোপুরি, পরক্ষণেই তা আবার পুনরায় পূর্বের রূপে ফিরে যাবে। আবারও আগুন তা খসিয়ে দেবে। তাদের আঘাত করা হবে আগুনের মুগুর দিয়ে।  

এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কখনও না! তারা নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। তুমি কি জানো হুতামা কি? (তা তো হলো) আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন। যা অন্তরসমূহকে গ্রাস করে। তা তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে। অতি উঁচু স্তম্ভসমূহে। ’ -সূরা হুমাযাহ: ৪-৯

কোরআনে জাহান্নামের পানি আর ছায়ার বর্ণনাও রয়েছে। তার ধরণ হলো- তারা পানি চাইলে দেওয়া হবে গলিত সীসা আর ছায়া হবে উত্তপ্ত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা থাকবে অতি উষ্ণ বাতাস ও গরম পানিতে। ছায়া হবে উত্তপ্ত। ’ -সূরা ওয়াকিয়া: ৪২-৪৩

কোরআনের বর্ণনায় উঠে এসেছে এমন আরও বহুবিধ শাস্তির কথা। আর এসব বর্ণনার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা চেয়েছেন প্রিয় বান্দাদের সতর্ক করতে। জাহান্নামের এতসব বর্ণনা থাকলেও কিন্তু কোথাও আসেনি শীতল শাস্তির বর্ণনা। তাই বলে কি শীতল কোনো শাস্তি আখেরাতে হবে না?

এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আসুন শুনে নেই কোরআনের একটি আয়াত। ওই আয়াতে আল্লাহতায়ালা জান্নাতিদের নিয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘তারা সেখানে আস্বাদন করবে না শামস (উত্তপ্ততা) এবং যামহারির (শীতলতা)। ’ -সূরা দাহর: ১৩
কোরআনের কারিমের ব্যাখ্যাকাররা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন- গরমও নয়, ঠান্ডাও নয়। -তাফসিরে জালালাইন, সফওয়াতুত তাফাসির আর যামহারির শব্দের অর্থ হলো- প্রচণ্ড ঠান্ডা। -আল মুজাম আল ওয়াসিত, হাশিয়ায়ে বোখারি

তীব্র গরম এবং তীব্র শীত অনুভূত না হওয়াকে জান্নাতিদের নিয়ামত বলা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, উভয় অনুভূতি জাহান্নামিদের শাস্তি হবে, যা না থাকাটা জান্নাতিদের কাছে নিয়ামত মনে হবে।

এবার আসি হাদিসের দিকে। সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করলো- আমার এক অংশকে অপর অংশ খেয়ে ফেলছে। তখন রাব্বে কারিম তাকে দু’বার শ্বাস নেওয়া অনুমতি দিলেন। একবার গ্রীষ্মকালে, আরেকবার শীতকালে। তোমরা গরমের যেই প্রচণ্ডতা অনুভব করো- তা জাহান্নামের উত্তপ্ততা থেকে আর শীতের যে তীব্রতা অনুভব করো; তা জাহান্নামের শীতলতা (যামহারির) থেকে। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

বর্ণিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়- জাহান্নামের শাস্তিসমূহ থেকে শীতলতাও এক ধরণের শাস্তি। কিন্তু জান্নাতের আনন্দদায়ক অনুভূতি যেমন শোনেনি কোনো কান, দেখেনি কোনো চোখ, কল্পনা করেনি কোনো অন্তর, তেমনি জাহান্নামের শাস্তির কণা পরিমাণও দুনিয়াতে আমরা অনুভব করতে পারবো না। বস্তুত জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতা মানুষের ধারনার বাইরে।  
এখন প্রশ্ন হতে পারে, তবে কোরআনের কোথাও কেন শীতল কোনো শাস্তির বর্ণনা আসেনি?

এর উত্তরে আরেকটি আয়াত উল্লেখ করা যায়- ‘অবাধ্যদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্ট বাসস্থান। তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। সে আস্বাদন করুক- গাসসাক্ব (পুঁজ) এবং হামিম (গরম পানি)-এর স্বাদ এবং একই আকৃতির আরও অনেক। ’ সূরা সোয়াদ: ৫৫-৫৮
আয়াতে ‘একই আকৃতির আরও অনেক’ অংশের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, উল্লেখিত আজাবের অনুরূপ অন্যান্য আজাব। যেমন- প্রচণ্ড ঠান্ডা। অতি উষ্ণ বাতাস, জাক্কুম ভক্ষণ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার শাস্তি। -সফওয়াতুত তাফসির
সুতরাং আয়াতে শীতলতার নেতিবাচক কোনো কিছু তো নেই-ই বরং পরোক্ষভাবে এর উল্লেখ রয়েছে।  
আল্লামা ইবনুস সুন্নি (রহ.) ‘আমালুল লাইল ওয়াল ইয়াওম’ কিতাবে এক দুর্বল হাদিস উল্লেখ করেছেন। তা এই- সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রচন্ড গরমের দিনে যখন বান্দা বলে- ‘আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। আজ কি গরম! হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিন। ’ তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, আমার এক বান্দা তোমার উত্তপ্ততা থেকে মুক্তি চেয়েছে। তুমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে তা থেকে মুক্তি দিলাম। ’ প্রচন্ড শীতের দিনে যখন বান্দা বলে- আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। আজ কি শীত! হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের যামহারির (শীতলতা) থেকে মুক্তি দিন। আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন- আমার এক বান্দা তোমার শীতলতা থেকে মুক্তি চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রাখছি, আমি তাকে তা থেকে মুক্তি দিলাম।  

সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যামহারির কি? তিনি বললেন, একটি ঘর, যাতে কাফেরদের নিক্ষেপ করা হবে। তা দেহের এক অংশকে আরেক অংশ থেকে পৃথক করে ফেলবে। ’

আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে জাহান্নামের আগুন ও কষ্টদায়ক শীতলতা ইত্যাদি শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।