ফিলিস্তিনের বুকে অবস্থিত মসজিদুল আকসা—এটি মুসলমানদের কাছে পবিত্রতম স্থান। এই মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং এর মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদার ২১ নম্বর আয়াতে মুসা আলাইহিস সালামের জবানিতে ফিলিস্তিন ও এর আশপাশের অঞ্চলকে ‘পবিত্র ভূমি’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন— ‘হে আমার সম্প্রদায়, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্ধারণ করেছেন, তোমরা তাতে প্রবেশ করো এবং পশ্চাৎপসরণ করো না, নইলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ’
ফিলিস্তিন এতটাই মোবারক স্থান, এখান থেকেই শুরু হয়েছিল নবীজির ইসরা ও মেরাজ। সূরা বনী ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন— পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি ভ্রমণ করিয়েছেন—আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত—যার পরিবেশ আমি করেছি বরকতময়—তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য।
ফিলিস্তিন শুধু ইতিহাস নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন। বহু আঘাত এসেছে, বহু অত্যাচার চলেছে; কিন্তু মুছে যায়নি আকসার পবিত্রতা। অতীতে যেমন সত্য বিজয়ী হয়েছে, ভবিষ্যতেও বিজয়ীদের ভূমি হবে ফিলিস্তিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাস তথা ফিলিস্তিনকে বিজয়ীদের ভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন—ইহুদিদের জুলুম, অত্যাচার ও দখলদারিত্ব একদিন শেষ হবে। মুসলমানদের একটি দল তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে।
হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর অটল থাকবে, শত্রুরা তাদের সামনে দুর্বল হবে। কোনো বিপরীত পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না। তারা আল্লাহর আদেশে কেয়ামত পর্যন্ত এমনই থাকবে।
সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল, তারা কোথায় অবস্থান করবে? তিনি বলেন— তারা থাকবে বায়তুল মুকাদ্দাস ও তার আশেপাশে।
সহীহ মুসলিম (খণ্ড ৩, হাদিস ২৮৯৬)-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) থেকে বর্ণিত— পূর্ব দিক অর্থাৎ খোরাসান থেকে কিছু মানুষ বের হবে, যারা ইমাম মাহদির খেলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খেলাফতের পথ সুগম করে দেবে। এর অর্থ দাঁড়ায়, কেয়ামতের আগে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে, দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে, আর মুসলমানদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবীজী বলেন— কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। মুসলমানরা তাদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদিরা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন সেই পাথর বা গাছ বলে উঠবে—হে আল্লাহর বান্দা, আমার পেছনে একজন ইহুদি আছে, এসো এবং তাকে হত্যা করো।
আল্লাহ তাআলা দাজ্জালের হাত থেকেও মসজিদুল আকসাকে রক্ষা করবেন। এক হাদিসে এসেছে— দাজ্জাল পৃথিবীতে ৪০ দিন অবস্থান করবে। তার প্রভাব পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তবে চারটি মসজিদ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে— কাবা শরিফ, মসজিদে নববী, মসজিদুল আকসা এবং মসজিদে তূর।
মসজিদুল আকসা শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মার প্রতীক। এ মসজিদের আশপাশে যে ধৈর্যশীল মুসলিমগণ রয়েছেন, তারাই সেই বিজয়ী দল—যাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২৫
এমজে