ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ফোনকলে ভয়, টেক্সটেই ভরসা জেন-জি’র 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
ফোনকলে ভয়, টেক্সটেই ভরসা জেন-জি’র 

ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা জেনারেশন-জি পেশাজীবীদের বড় একটি অংশ এখন ফোনকলে ভয় বা অস্বস্তি অনুভব করেন।  

রিক্রুটমেন্ট ফার্ম রবার্ট ওয়াল্টার্সের আরব আমিরাতে করা এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অর্ধেকেরও বেশি জেন-জি কর্মী ফোনে কথা বলতে উদ্বিগ্ন থাকেন।

বরং তাদের ৫৯ শতাংশ ই-মেইল কিংবা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংয়ের মতো বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

স্মার্টফোন হাতে বড় হওয়া প্রথম প্রজন্ম হয়েও, তারা এখন টেক্সট মেসেজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও সরাসরি ফোনকলে যোগাযোগ করতে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়েন। এই প্রবণতাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘ফোন ফোবিয়া’ বা ‘ফোন অ্যাংজাইটি’। এটি এক ধরনের যোগাযোগভীতি, যেখানে কথা বলার পরিবর্তে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।

এমন অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ২৩ বছর বয়সী মার্কেটিং পেশাজীবী আহমেদ আমিন বলেন, যখনই মোবাইলে ইনকামিং কল দেখি, মনে হয় কিছু একটা খারাপ খবর আসছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্ক ধরে নেয়, নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফোনভীতির পেছনে মূল কারণ হলো সামাজিক উদ্বেগ এবং যোগাযোগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা। টেক্সটিং মানুষকে নিজের উত্তর চিন্তাভাবনা করে সাজানোর সুযোগ দেয়। ফোনকলে হঠাৎ করে উত্তর দিতে হয়, যার অনিশ্চয়তা অনেকের মনে ভয় তৈরি করে।

এছাড়াও নেতিবাচক কোনো বার্তা পাওয়ার ভয়ে ফোনকল এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে নিরাপদ বোধ করা টেক্সটিং বা মেসেজিং মাধ্যমেই তারা বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, নতুন প্রজন্ম ‘জেনারেশন জি’ বড় হয়েছে একটি ডিজিটাল-নির্ভর পরিবেশে, যেখানে যোগাযোগ সাধারণত তাৎক্ষণিক না হয়ে বিলম্বিত হয়। এটি টেলিফোন কলের সরাসরি ও তৎক্ষণাৎ যোগাযোগের ধরন থেকে একেবারেই ভিন্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং-নির্ভর পরিবেশে বেড়ে ওঠায়, তারা সংক্ষিপ্ততা ও স্পষ্টতাকেই গুরুত্ব দিতে শিখেছে—ফলে প্রচলিত ফোনকল এখন তাদের কাছে অনেকটা সেকেলে মনে হয়।

তাদের মতে, এই পরিবর্তন শুধু প্রযুক্তির কারণে নয়, বরং এটি নতুন প্রজন্মের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ধরন বদলে যাওয়ারই প্রতিচ্ছবি। এটি এক ধরনের ট্রমা রেসপন্সও হতে পারে। অনেকে সামাজিক চাপে বেড়ে উঠেছে, ফলে তারা পুরনো যোগাযোগের নিয়ম ভেঙে নিজেদের জন্য যোগাযোগের সস্তিদায়ক পথ খুঁজছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোন ফোবিয়া নিছক অস্বস্তির বিষয় নয়—এটি জেন-জির মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ কর্পোরেট সংস্কৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে চলেছে।

তথ্যসূত্র: খালিজ টাইস 

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।