ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল শিক্ষকের কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নিলো প্রতারকচক্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
স্কুল শিক্ষকের কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নিলো প্রতারকচক্র

ফেনী: সোনাগাজী উপজেলায় রবীন্দ্র কুমার দাস নামে এক স্কুল শিক্ষকের কোটি টাকা মূল্যে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীকে অস্ত্র দেখিয়ে তার বসতভিটা থেকেও বের করে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আলমগীর হোসেন নামে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এক বাসিন্দা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর রবীন্দ্র কুমার দাশের বসতভিটিসহ ১৯১ শতক জমি কৌশলে রেজিস্ট্রি করে নেন। জমির অর্থ পরিশোধ না করেই তিনি রেজিস্ট্রি করে নেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগও করেছেন রবীন্দ্র। তাই বাধ্য হয়ে তাকে তার সম্পদ ছেড়ে দিতে হয় বলেও তিনি দাবি করেন।

এমন ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের রাম কুমার মহাজন বাড়ির রবীন্দ্র কুমার দাসের বসতভিটায় গিয়ে তালা দেখা গেছে।

রবীন্দ্র কুমার দাস জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোস্তফা মিঞার ছেলে আলমগীর হোসেন তার ১৯১ শতক জমি কেনার পর ফেনী গিয়ে টাকা দেবেন বলে জানান। তিনি যদিও ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আলমগীর জানান, এত টাকা ব্যাংকে দিলে সরকার ধরবে। তা ছাড়া ব্যাংকও এখন নিরাপদ নয়। তাই সরল মনে জমির রেজিস্ট্রি করেন দেন রবীন্দ্র।

পরে তিনি টাকা চাইলে অস্ত্র বের করেন আলমগীর। খুন করে ফেলার ভয় দেখিয়ে অটোরিকশায় তুলে দিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন।  

রবীন্দ্র বলেন, তারা আমাকে টাকা তো দেয়নি, এখনও খুনের হুমকি দিচ্ছে। প্রাণভয়ে আমি আত্মগোপনে আছি। আমার ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ভূমি দস্যুরা। স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি প্রতারণা করে লিখিয়ে নিয়েছে। আমার স্ত্রী-সন্তান এক যুগের বেশি সময় ধরে ভারতে। সম্পত্তি বিক্রি করে আমি পরিবারের কাছে চলে যেতে চেয়েছিলাম।

এ ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত করে ফেনী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন এ স্কুল শিক্ষক। মামলা হলে সম্প্রতি হারুন নামে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু গা ঢাকা দেন আলমগীর ও নাসির নামে তার এক সহযোগী। অপর অভিযুক্তের নাম খুরশিদ আলম ভূঁইয়া। তিনি সোনাগাজী উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক বলে জানা গেছে।

তবে, অভিযোগের ব্যাপারে অত্মপক্ষ সমর্থন করে খুরশিদ বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। রাজনৈতিক কারণে আমাকে ফাঁসাতে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেছে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতাসহ কর্তাব্যক্তিদের কাছে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এ কাজ যারা করেছেন, তারা সবাই সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন বলেন, রবীন্দ্র রবীন্দ্র কুমার দাস একজন নিরীহ মানুষ। তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

এদিকে, স্কুল শিক্ষককে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রি অফিসার আকরাম হোসেন রিয়াদ। তিনি বলেছেন, প্রতারণার ঘটনায় গ্রহীতাকে অনুলিপি না দিয়ে সমাধান করা সম্ভব।

অভিযোগ ও মামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ বলেন, জমি সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি বিষয় যাচাই করে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আরও কি ব্যবস্থা আছে, তাও নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।