ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চার বছরেও সরেনি এমপি আব্দুল মমিনের শুভেচ্ছা তোরণ!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
চার বছরেও সরেনি এমপি আব্দুল মমিনের শুভেচ্ছা তোরণ!

সিরাজগঞ্জ: দিন যায়, মাস যায়, এভাবে পেরিয়ে যায় বছরও। কিন্তু মহাসড়কের পাশ থেকে সরে না সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মমিন মণ্ডলের শুভেচ্ছা তোরণ।

বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও উৎসব উপলক্ষে তোরণের শুধু ব্যানারটা পরিবর্তন হয়।  

সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ-এনায়েতপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার ওপর এভাবেই চার বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমপি আব্দুল মোমিন মণ্ডলের শুভেচ্ছা তোরণ।

ব্যস্ততম এ রুটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তোরণ স্থাপনের ফলে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী ও গাড়িগুলোকে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহনগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কের গাইড ওয়াল। ক্ষমতাসীন দলের এমপির তোরণ হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ওই সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সয়দাবাদ-এনায়েতপুর ১৯ কিলোমিটার সড়কটি বেলকুচি ও চৌহালী-শাহজাদপুর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের প্রধান রুট। তাঁতসমৃদ্ধ এ অঞ্চলের মানুষ জেলা সদর, ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ সারাদেশে যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়েই। এ সড়কের বেলকুচি উপজেলার সীমানা থেকেই এনায়েতপুর পর্যন্ত মোট আটটি স্থায়ী তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার মধ্যেই রয়েছে চারটি তোরণ। সেগুলো সূবর্ণসাড়া, মুকুন্দগাঁতী, পৌরভবনের সামনে ও কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত। বাকি চারটি রয়েছে সমেশপুর, আমবাড়িয়া, আজুগড়া ও এনায়েতপুর কেজির মোড়ে। স্থায়ী তোরণ নির্মাণে রাস্তার দুপাশে গাইড ওয়ালের অদূরে গভীর করে খুঁড়ে লোহার পিলার পুঁতে সেটা ইট-বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা হয়েছে।  

স্থানীয়রা জানান, সারাবছর বিভিন্ন জাতীয় ও দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে এসব স্থায়ী ও অস্থায়ী তোরণে এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হয়। দীর্ঘ চার বছর ধরেই এমনটা চলছে। রাস্তার গাইড ওয়ালের ওপরে এ স্থায়ী তোরণের কারণে রাস্তার একপাশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অপর পাশের বাইপাস রাস্তা কেটে তোরণ নির্মাণ করার কারণে যাতাযাতে সমস্যা হচ্ছে।  

ভ্যানচালক রিপন, খোরশেদ, সোহেল, ট্রাকচালক মাসুদ, সেলিমসহ অনেকেই বলেন, মাঝে মাঝেই তোরণের কারণে আমরা গাড়ি চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। আর মুকুন্দগাঁতী এলাকায় যানজট তো লেগেই থাকে।  

আব্দুল মোতালেব নামে এক ট্রাকচালক বলেন, অনেক সময় অন্য গাড়ির কারণে রাস্তা ছেড়ে গাড়ি পাশে নামাতে হয়। কিন্তু সেখানে পিলার থাকার কারণে দুর্ঘটনা শঙ্কা থেকে যায়।  

সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তার ওপর তোরণ থাকলে যানবাহন চলাচলে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হবেই। দুর্ঘটনা ও যানজটের ঝুঁকি থাকে।  

বেলকুচি পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা বলেন, পৌরবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি পৌরসভা এরিয়ায় অবস্থিত চারটি তোরণ অপসারণের জন্য এমপি সাহেবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তিনি সেগুলো অপসারণ করেননি।

সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী রাস্তার ১০ মিটারের (৩৩ ফুট) মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা বেআইনি হলেও এমপির তোরণ কীভাবে বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন স্থানীয়দের মধ্যে।  
 
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, আমরা আগে সড়কের ৩৩ ফুট এলাকার মধ্যে কোন স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য পুরো জেলাজুড়েই নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তোরণের বিষয়ে আমাদের লিখিত কেউ অভিযোগ করেনি, মাসিক আইনশৃঙ্খলা বা উন্নয়ন মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।  

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (রাজশাহী জোন) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমি তো নতুন এসেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।