ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ভোলার আম বাগান! 

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ভোলার আম বাগান!  আম বাগান

ভোলা: সারি সারি গাছ। আর এসব গাছে ঝুলছে বাহারি রংয়ের আম।

কোনোটি সবুজ আবার কোনোটি হলুদ-বা লালচে বর্নের। বিগত সময়ের তুলনায় এবার আমের ফলন ভালো হওয়াতে খুশি ছিলেন কৃষক। তারা স্বপ্ন দেখছিলেন লাভবান হবেন। পাকা আমের ঘ্রানে ছেয়ে যাবে চারপাশ।

কারো বাগানে আম রুপালি, কারো বাগানে বারি, গৌরমতি, হাড়ি ভাঙ্গা, বেনানা, কাটিমন, থাই কাঁচা মিঠা, কিউ জাই, কিং অফ চাকাপাত, রেড আইভরি, ব্রুনাই কিং, হিমসাগর ও ল্যাংড়াসহ বাহারি নামের ও জাতের আম।  

এ মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় বাজার দামও ভালো পাবেন বলে মনে করছিলেন তারা। কিন্তু ফলনের মাঝপথেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাপদাহ। গত কয়েকদিনের টানা খরা আর রোদের তাপের কারণে ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। যেন রোদের তাপে পুড়ছে আমের বাগানগুলো। মৃদু তাপদাহের কারণে আম বাগানে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে জানান চাষিরা।

আবহাওয়া অফিস বলছে, টানা এক সপ্তাহ ধরে কখনও ৩৬ ডিগ্রি আবার কখনও বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করছে। আর এ কারণে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে গাছ থেকে আম ঝড়ে পড়া আর পোকার আক্রমণ ভাবিয়ে তুলেছে কৃষকদের। এতে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

অনাবৃষ্টি আর টানা খরার কবলে পুড়ছে আমের বাগান। এ তাপদাহ আরও বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকলে ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষিবিভাগ।  

তবে এ সংকট দূর করতে সকাল-বিকেল দুইবার আমের বাগানে পানি দিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষিবিভাগ।

সূত্র জানায়, টানা তাপদাহে পুড়ছে উপকূলীয় জেলা ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। রোদের কারণে কাজে যেতে পারছেন না দিনমজুরেরা। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। এর মধ্যে রোদের তাপে গাছ থেকে বাগানের আম ঝরে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেতে আবার পোকার আক্রমণ। এতে আর্থিকভাবে লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের।

তবে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  

ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক জানান, টানা এক সপ্তাহ ধরে চলছে মৃদু তাপদাহ। যার প্রভাব পড়েছে দ্বীপজেলার ভোলার জনজীবনে। যা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কৃষকরাও। কৃষকদের বিস্তীর্ণ আমের বাগান এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। রোদে আর তাপমাত্রায় গাছ থেকে আম ঝরে যাচ্ছে এবং ফেটে বিবর্ণ হয়ে গেছে। চৌচির হওয়ার উপক্রম ফসলের ক্ষেত। কোনো ক্ষেতে আবার পোকার আক্রমণ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষি ও খামারিরা।

ভোলা সদরের বাপ্তা ইউপি চেয়ারম্যান ও আম বাগান মালিক ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা বলেন, আমার বাগানে ২ হাজার ৫শটি আম গাছ রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের তাপদাহে আম ঝরতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছ ও আম। এতে আমরা লোকসানের আশঙ্কা করছি। আমার মত অন্য চাষিদেরও একই অবস্থা।

এদিকে আমের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে গাছে দুইবেলা পানি স্পে করার পরামর্শ দেওয়া হলেও যেন কোনো কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অনেক চাষি। ইদ্রিস ও ইব্রাহিম বলেন, শুরুর দিকে ভালো ফলন হয়েছে, এখন অবস্থা অনেকটা নাজুক এভাবে চলতে থাকলে সব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ অবস্থায় আমের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম রনি। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত স্প্রে চালিয়ে যেতে হবে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবির বলেন, টানা তাপদাহ অব্যাহত থাকলে বোরো ধান এবং আম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বোরো চাষিদের ক্ষেতে যাতে দুই ইঞ্চি বা তার বেশি পানি থাকে সে পরামর্শ দিয়েছি। আম চাষিদের দু'বেলা বাগান স্প্রে করতে হবে।

দ্বীপজেলা ভোলায় ব্যাপক পরিসরে আমের চাষ না হলেও এ বছর জেলায় ৩৬৭টি বাগানে আমের ফলন হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ আম বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।