ঢাকা: নাচ-গান-আবৃত্তি-যোগ ব্যায়ামসহ নানা আয়োজনে বর্ষপূর্তি, নববর্ষ ও ঈদ পুনর্মিলনী উদযাপন করেছে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ললিতকলা কেন্দ্র।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বর্ষপূর্তি উদযাপন করে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রটি।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম মসিউল হোসেনের সভাপতিত্বে এ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব ও রবীন্দ্র গবেষক ভুইয়া শফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক কাওসার হাসান টগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ড. প্রিয়াংকা গোপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন নৃত্যশিল্পী ও স্থপতি তামান্না রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তি শিল্পী ও নাট্যকর্মী ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সংগীত শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সংগীত শিল্পী ও যোগ ব্যায়াম বিশারদ কুশল রায় জয় এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাসুদুর রহমান। মূল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জান্নাত ও ড. অনুপম কুমার পাল।
‘আলোয় ভুবন ভরা’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ললিতকলা কেন্দ্রের ৬টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের শিল্পচর্চার ঝলক তুলে ধরেন। কখনো সুরের মুর্ছনায়, কখনো নৃত্যের ছন্দে, কখনও আবার কণ্ঠের মাধুর্যে দর্শকদের মন মাতিয়ে তুলেন তারা। আগতদের সামনেই মঞ্চে তুলির আঁচড়ে হাতি-ঘোড়া এঁকে নিজেদের দক্ষতা দেখান খুদে চিত্রশিল্পীরা। শরীর ও মনের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়তে ছিল যোগ ব্যয়ামের বিভিন্ন কসরত।
সংগীত শিল্পী ও যোগ ব্যায়াম বিশারদ কুশল রায় জয়ের সঞ্চালনায় যোগ ব্যায়াম পরিবেশনের মাধ্যমেই সূচনা হয় মূল অনুষ্ঠানের। ললিতকলা কেন্দ্রের যোগব্যায়াম দল পরিবেশন করেন পদ্মাসন, বীরভদ্রাসন, বৃক্ষাসন, তুলাদণ্ডাসন, উৎকাটাসন, বকাসন, রাজকপোতাসনসহ বিভিন্ন ব্যায়াম। এরপরেই কেন্দ্রটির আবৃত্তি দল পরিবেশন করে ‘আমার দেশ’ শীর্ষক আবৃত্তি। বিভিন্ন বয়সের ছোট শিল্পীরা হাজির হয় প্রকৃতির রঙিন রূপে সাজানো চার ঋতুর গান নিয়ে। তাদের কণ্ঠে ফুটে উঠে ‘গ্রীষ্ম, বর্ষ, শরৎ, হেমন্তের ছন্দ’। ‘আলো আমার আলো’ গানে আলোর বার্তাও দেয় সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। গণতন্ত্রের স্পন্দন নিয়ে পরিবেশন করা হয় গান ‘আমরা সবাই রাজা’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মজার কবিতা ‘নতুন খাবার’ আবৃত্তি শুনে দর্শকরা যেন ফিরে যান তাদের ছোট বেলায়।
শিশুরা শেখে আনন্দে। আর সেই শেখারই এক উজ্জ্বল উপস্থাপনা ‘পাঠশালা’ পরিবেশন করে ললিতকলা কেন্দ্রের নৃত্য বিভাগ। তারপর আবার ছোট শিশুরা আবৃত্তি করে শোনায় ভবানীর কবিতা ‘এলো বৈশাখ, বাজে ঐ শাঁখ’ ও সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’। পরিবেশন করে ‘হারে রে রে’ ও ‘ভূতের রাজা দিলি বর’ নাচ।
এরপর একে একে পরিবেশন করা হয় একক ও দলীয় নাচ, গান, যন্ত্রসংগীত ও আবৃত্তি। যা দর্শকদের মনোমুগ্ধ করে রাখে। শেষে পরিবেশন করা হয় দলীয় নৃত্য ‘আইলো আইলো আইলো রে বৈশাখ আবার আইলো রে’।
এছাড়া গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ললিতকলা কেন্দ্র। সেই প্রতিযোগিতায় দুই বিভাগে বিজয়ী ৬ জনকে অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মধ্যেই আগত অতিথিরা বক্তব্য দেন। বসুন্ধরা গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাসুদুর রহমান বলেন, "আমি ঢাকা শহরে এসেছিলাম কবিতা লেখার জন্য। সেটা আমার পক্ষে হয়ে ওঠেনি। তাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিকে আমার দুর্বলতা আছে। আজকের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে আমি আপ্লুত ও আনন্দিত। আমি মনে করি ললিতকলা কেন্দ্র সামনে আরও অনেক দূর যাবে। "
তিনি বলেন, "আমাদের বসুন্ধরা গ্রুপ শিশুদের জন্য অনেক কিছু করে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিশুদের জন্য একটি দুর্দান্ত স্কুল করেছেন, বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সেখানে শিশুদের পড়াশোনার বাইরে আরও ১০টি বিষয় শেখানো হয়। সাঁতার, কারাতে, চিত্রাঙ্কন, কুংফুসহ আরো অনেক কিছু শেখানো হয়। আমরা চাই, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেইভাবেই গড়ে উঠুক, যে মাত্রায় যাওয়ার স্বপ্ন আমরা বাংলাদেশ নিয়ে দেখেছি। "
সভাপতির বক্তব্যে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম মসিউল হোসেন বলেন, "হাঁটি হাঁটি পা পা করে ললিতকলা কেন্দ্র আজকে এ পর্যন্ত এসেছে। আমরা এটাকে আরও চমৎকার একটি রূপ দিতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমরা সেটা করতে পারবো। ছোট শিশুদের যদি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। "
অনুষ্ঠানস্থলে বসুন্ধরার পণ্যের তিনটি স্টলে ট্রেড প্রাইজে লেখার খাতা, আর্ট পেপার, দিস্তা কাগজ, টয়লেটিজ পণ্য, টিস্যু, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
এসসি/আরআইএস