ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আবাসন খাত বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায়

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২৩
আবাসন খাত বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায়

আসাদুর রহমান একজন তরুণ ব্যবসায়ী। কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হওয়ায় এ বছর ঢাকায় একখণ্ড জমি কেনার চিন্তা করেছিলেন।

তবে হঠাৎ জমি নিবন্ধনে উৎস কর ২৪ গুণ বেড়ে যাওয়ায় ওই চিন্তা থেকে সরে এসেছেন তিনি।

আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমার ব্যবসা খুব বেশি বড় না। গত দুই বছর ব্যবসা কিছুটা ভালো হয়েছে। চিন্তা করেছিলাম ঢাকায় একটুকরা জমি কিনে কিছু টাকা বিনিয়োগ করব। কিন্তু বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন কর এলাকাভিত্তিক ২৪ গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় জমিতে বিনিয়োগ করা আর নিরাপদ হবে না বলে মনে হচ্ছে। তাই আপাতত জমি কেনার চিন্তা বাদ দিয়েছি। ’

আসাদুর রহমানের মতো ছোট-বড় অনেক ব্যবসায়ী জমিতে বিনিয়োগ লাভজনক ও নিরাপদ মনে করেন। তবে উৎস কর ২৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ঢাকা বা বড় শহরে জমিতে বিনিয়োগ করা আর নিরাপদ মনে করছেন না।

অন্যদিকে অতিরিক্ত কর আরোপ করা আবাসন খাতের জন্য হুমকি বলে মনে করছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিএলডিএ)। গত ৬ জুলাই বিএলডিএর সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএলডিএ মনে করে, জমি নিবন্ধনে অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমবে। পাশাপাশি অনেকে দেশের বাইরে বাড়ি-ঘর করতে আগ্রহী হবেন। ফলে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

জানা গেছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় উৎস কর বিধিমালায় নতুন এই কর নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২৬ জুন এ নিয়ে বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

ওই বিধিমালা অনুযায়ী, দেশের যেকোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি (জমি) ও ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর করতে এলাকাভিত্তিক ২৪ গুণ, কোথাও এর চেয়েও বেশি কর গুনতে হবে। ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যেকোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য শুধু উৎস কর হিসেবে কাঠাপ্রতি তিন লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে, যা এর আগে ছিল ১৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা।

আয়কর বিধিমালার সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর আদায় শীর্ষক ৬ নম্বর ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরের পৌরসভা এলাকায় উৎস কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের যেকোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোয় ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেন। আর ওই প্রস্তাব বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কর পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ বিএলডিএর

প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বিএলডিএ বলেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত জমি, জমিসহ বাড়ি, যেকোনো স্থাপনা—বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উৎস কর ছিল দলিল মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪ শতাংশের পরিবর্তে দলিল মূল্যের ওপর ৮ শতাংশ কিংবা এলাকার ওপর ভিত্তি করে কাঠাপ্রতি ২০ লাখ, ১২ লাখ, ১০ লাখ, আট লাখ, ছয় লাখ ও তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এলাকাভেদে কর হার ২৪ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এত বেশি কর নির্ধারণের ফলে জনগণ জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহ হবে। উল্টোদিকে দেশের বাইরে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে তারা। এসব কারণে বিদেশে অর্থপাচারও বেড়ে যেতে পারে। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দেশের আবাসন খাতে চরম অস্থিরতা দেখা দেবে। জমি বেচাকেনা কমে গেলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে। উচ্চ কর হার অযৌক্তিক, অমানবিক, স্বেচ্ছাচারী এবং বাস্তবায়ন অযোগ্য উল্লেখ করে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশন কর সহনীয় পর্যায়ে আনতে উৎস কর পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

আবাসন ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এই খাতে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। উৎস করসহ অন্যান্য কর কমানো না হলে ১০ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং এক কোটি মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এতে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৩
এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।