ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংবাদ সম্মেলনে জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জাকার্তা যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জাকার্তা যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: আসিয়ানের ৪৩তম শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়া সফরে যাচ্ছেন। সফরকালে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি আগামী ৫-৭ সেপ্টেম্বর জাকার্তায় অনুষ্ঠেয় আসিয়ানের ৪৩তম শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া  সম্মেলনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া সফর করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।

তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়া সফরকালে রাষ্ট্রপতি আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানদের সম্মানে ইন্দোনেশিয়ার  রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশভোজে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অংশ নেবেন।

আসিয়ানের পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি গেস্ট অব চেয়ার হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেবেন। আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্র এবং অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়ন এবং শক্তিশালীকরণ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই সম্মেলনে আসিয়ান মেরিটাইম আউটলুক, আসিয়ান ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক এবং মিয়ানমার সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান সচিবালয়, আইওআরএ ও প্যাসিফিক আইল্যান্ডস ফোরামের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রেখে একটি মর্যাদাপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা।  

বৈশ্বিক মন্দা ও চলমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করে আসিয়ানকে বিশ্বের কাছে টেকসই প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ইন্দোনেশিয়া কাজ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আসিয়ান সহযোগিতাকে আরও বেগবান করার জন্য আসিয়ান সভাপতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মোমেন জানান, রাষ্ট্রপতির এ সফরকালে উভয় দেশের রাষ্ট্রপতি পর্যায়ে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে মালয়েশিয়া, পূর্ব তিমুর, ভিয়েতনামসহ আরও দু-একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির এ সফরে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমটি হলো জ্বালানি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা, দ্বিতীয়টি হলো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা।

মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ানের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের অংশ হিসেবে সংস্থাটির সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। রাষ্ট্রপতির এ সফরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চলমান সহযোগিতা আরও বাড়ানো এবং গভীরতর করাসহ আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রার্থিতাকে আরও জোরালোভাবে অনুরোধ করা যাবে।  

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে আসিয়ানের বন্ধুপ্রতিম সরকারসমূহকে অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর সহযোগিতা করার বিষয়ে অনুরোধ ও দৃঢ়তর ভূমিকা রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি জোরালো আহ্বান জানাতে পারবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসমূহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার স্বপক্ষে প্রচারণার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।

এর আগে ২০০৫ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রথম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছে। সাধারণত পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের বার্ষিক সভা পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন হিসেবে পরিচিত।  

পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের মৌলিক উদ্দেশ্য এবং নীতি হলো পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বজায় রাখার লক্ষ্যে কৌশলগত, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বিস্তারিত সংলাপ এবং আলাপ-আলোচনা করা।

পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে আলাপ-আলোচনার জন্য ছয়টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে, যথা- পরিবেশ ও জ্বালানি, শিক্ষা, অর্থ, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা-মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও আসিয়ান সংযোগ। এই অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বিস্তারের জন্য কর্ম-পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে।  

পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
টিআর/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।