ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাচারকৃত অর্থ ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩
পাচারকৃত অর্থ ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলটির নেতারা এ আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের জন্য পাচার এক মারাত্মক সমস্যা। কিন্তু বছরে কত টাকা পাচার হয় বা বিগত ১৫ বছরে আমাদের মোট কত টাকা পাচার হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য বা হিসাব কারও কাছে নেই। সরকার চায় না এ হিসাব থাকুক। তারা এসব পাচারের হিসাব এবং তথ্য-উপাত্ত সচেতনভাবে নষ্ট করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমেরিকার ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট নামক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশের অবৈধ অর্থপাচার এবং আত্মসাৎ নিয়ে কাজ করে। তারা ২০১০, ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে আমাদের দেশের সম্ভাব্য পাচার নিয়ে তিনটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাদের হিসাবে ২০০৬ থেকে ২০১৫ এই ১০ বছরে প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে তারা অনুমান করেছিল। তাদের হিসাব অনুযায়ী এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৩ নাগাদ প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার কথা।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত ৬ বছরে ৩৩টি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮২১ কোটি টাকা পাচার করেছে। দেশে মানি লন্ডারিং আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন সবই আছে। কিন্তু সবকিছুই এমন পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে, যাতে কোনো সংস্থাই পাচারকারীদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে না পারে।

তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৫ বছরে সরকার ঘনিষ্ঠদের হাতে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি তুলে দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটি'র ব্যবস্থা করেছে। এ সমস্ত মেগা প্রজেক্টকে লুটপাট, আত্মসাং এবং পাচারের মহোৎসবে পরিণত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমাজ এবং শাসনব্যবস্থা ফেরত আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এসব লুটেরা পাচারকারী মাফিয়াদের সিন্ডিকেট। মূলত, বাংলাদেশকে কোনো সরকার পরিচালনা করছে না; বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে মাফিয়াদের স্বার্থে, মাফিয়াদের মনোনীত সিন্ডিকেট দ্বারা। এরাই আইন, আদালত, প্রশাসন, সংসদ, বিচারবিভাগ, ব্যাংক, বীমা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা, মিডিয়ার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে গত আড়াইশ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের নিজের আয়ের ওপর ভিত্তি করে ঘুরে দাঁড়ানোর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তাকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায় অর্থ পাচার রোধ ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে চারদফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো-

১) বাংলাদেশের লুটপাট ও পাচার বন্ধ করতে হবে। লুটপাট ও পাচার বন্ধের সকল আইন-কানুন সংস্কার করতে হবে।

২) পাচার ও লুটপাটবিরোধী আন্তর্জাতিক যে সমস্ত আইন, কনভেনশন, প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বাংলাদেশকে অবিলম্বে সেই সমস্ত আইন এবং কনভেনশন করতে হবে।

(৩) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারাসহ অপরাপর সব দেশকে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত সম্পদ অনুসন্ধান, চিহ্নিত এবং বাজেয়াপ্ত করার জন্য দেশের জনগণের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।

৪) গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার একটি শ্বেতপত্র সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে। পাশাপাশি এসব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এরই মধ্যে কানাডা আমাদের কাছে বেগমপাড়া হিসেবে বিখ্যাত, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোমের জন্য বিখ্যাত। সুইস ব্যাংকে আমাদের লোকদের টাকা-পয়সায় ভর্তি ছিল, রাতারাতি সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা এমন যে, বাংলাদেশে যা কিছু উদ্বৃত্ত, পুঁজি বা সঞ্চয় হতো পারতো, তা প্রতিনিয়ত এক শ্রেণির আমলা, কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা এবং ব্যবসায়ীদের আড়ালে মাফিয়ারা বিনা বাধায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তারা এসব অর্থ বিনিয়োগ করছে, ভোগ-বিলাস করছে।

তিনি আরও বলেন, যখন দেশে এমন অবাধে অর্থনৈতিক লুটপাট, পাচার চলছে, তখন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতা, মানুষের বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করছি। মিথ্যা মামলা, হামলা, গুম, খুন থেকে দেশের মানুষকে রেহাই দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতার মূল কারণ লুটপাট ও অর্থ পাচার। এগুলোই দেশে মাফিয়াতন্ত্র বা স্বৈরাতন্ত্রের মূল অনুপ্রেরণা বা ভিত্তি। আমরা এসব সম্পদ বিদেশে পাচার বন্ধের পক্ষে। যেসব আইন-কানুনের সুবিধা নিয়ে এসব অর্থ পাচার হয়, সেগুলো বন্ধের পক্ষে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে আইন আছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনভেনশন আছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশের সরকার চায় না এসব আইন-কানুন এখানে প্রয়োগ হোক। তাই আমরা দেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে পাচারকৃত অর্থ জব্দ করে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাই।

এ সময় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন ও সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।