ঢাকা: পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলারের কথা উত্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
এদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন। আর পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।
পরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইকবাল হুসেইন খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান ও রফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হিস্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা ২০০ মিলিয়ন সমপরিমাণ ডলার হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকে পড়া পাকিস্তানি স্বদেশে ফিরে গেছেন। এখনো বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি রয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্কয়ের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমরা ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দুদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগির দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।
বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষাবৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যোগ দিতে বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
২০১০ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদে সর্বশেষ বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। এরপর ১৫ বছর এই বৈঠক আর হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো।
আরও পড়ুন: গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে পাকিস্তান
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭ , ২০২৫
টিআর/জেএইচ