ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শুরুতেই শনাক্ত হলে বঙ্গবাজার-কৃষি মার্কেটে এত ক্ষতি হতো না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
শুরুতেই শনাক্ত হলে বঙ্গবাজার-কৃষি মার্কেটে এত ক্ষতি হতো না

ঢাকা: বঙ্গবাজার ও কৃষি মার্কেটে দেরিতে খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। দুই মার্কেটে যদি আগুনের সূত্রপাতের শুরুতেই আগুন শনাক্ত করে নির্বাপন করা যেতো তাহলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এমন দাবি করেন।

দুর্যোগে সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভিত্তিক মডেল প্রদর্শনের জন্য, বেসরকারি খাতের সঙ্গে 'টেকনোলজি ইন ডিআরএম টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ: অপর্চুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব এআইবিএস সলুশন ইন হ্যাজার্ড এনটিসিপেশন' শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, এআই ডিটেক্টর সিস্টেম অবশ্যই উপকারি ও প্রযুক্তিবান্ধব। আমরা কমিউনিটি বান্ধব অনেক কিছুই করি না, কমিউনিটিকে আমাদের উন্নত করতে হবে।

অগ্নিঝুঁকি হ্রাসে কমিউনিটি বান্ধব ব্যবস্থার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ঢাকার প্রত্যেক ভবনে পানির ট্যাংক আছে। সেটির সঙ্গে যদি ফায়ার হাইড্রেন্ট সংযুক্ত করে সড়কে স্থাপন করা হয়, তাহলে অনেক বেশি কার্যকর হবে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে।

তিনি বলেন, ম্যানুয়ালের দিন শেষ, এখন অটোমেটিক সিস্টেমের যুগ। আমাদের দেশে প্রচুর মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে। তাদের আমরা ব্যবহার করতে পারি। নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-পরিকল্পনা কাজে লাগানো সম্ভব। এজন্য সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি কর্মশালায় সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে আগুন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রশংসা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) যুগ্ম মহাসচিব জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের চেষ্টা সত্ত্বেও সব প্রতিষ্ঠানকে একছাতার নিচে আনতে পারিনি। চাইলেই সম্ভব এআই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বার্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটে আগুন লাগলেও ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানে ডিটেক্টর ছিল না। এর কদিন পরই সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন লেগেছিল। কিন্তু সেখানে আগুন খুব দ্রুত শনাক্ত ও নির্বাপনও সম্ভব হয়েছে।  কারণ সেখানে প্রাথমিক পর্যায়েই ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়েছিল ডিটেক্টর ব্যবস্থার কারণে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বর্ণনা করার জন্য কর্মশালায় এআই ভিত্তিক মডেল প্রদর্শন করা হয়। এআই কীভাবে কাজ করে সেটি প্রদর্শন করে কর্মশালায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান বলেন, আগুন লাগলে এআই সিস্টেমে সংকেত আসবে। যাতে করে দ্রুত অগ্নিপরবর্তীতে দ্রুত নির্বাপন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

তিনি বলেন, একটি ম্যাপের মধ্যে সব মার্কার থাকবে, কোথায় হোটেল, আবাসিক ভবন, মার্কেট আছে। কোথায় কেমন রাস্তা, কোন দিক দিয়ে আগুন লাগলে দ্রুত মুভ করা যায় সেটি ম্যাপ সংকেত দেবে, এটি প্রক্রিয়াধীন।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরের মতো পৃথিবীর কোথাও নেই। এখানে ২৫ শতাংশ সড়ক নেই, পার স্কয়ার কিলোমিটারে ২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। ঢাকার জলাশয় কমছে, মাঠ কমছে। পানির সোর্স কমছে। যদি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে যায় এ শহর অবশ্যই ধ্বংস হবে। তখন কিন্তু ঢাকা আর ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।

তিনি বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছি। কিন্তু আমরা আতঙ্ক তৈরি করতে চাই না, তবে এটি বাস্তবতা। কেউই এটি ডিকস্ট্রাকশন ও রি-কনস্ট্রাকশনকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। ক্ষতি যারই হোক, ক্ষতিটা দেশের।

তিনি বলেন, এআই প্রযুক্তির বড় সুবিধা হচ্ছে দ্রুত আগুন বা ধোয়া শনাক্ত করে জানান দেয়া। বঙ্গবাজারের আগুন ২-৩ ঘণ্টা মিট মিট করে জ্বলেছে। একইভাবে কৃষি মার্কেটেও আগুন লাগার অনেক পর খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শুরুতেই যদি শনাক্ত করা যেতো তাহলে এতো বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হতো না। এক্ষেত্রে এআই হবে খুবই কার্যকরী।

ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও ভাল প্রস্তুতি এবং দুর্যোগে সহনশীলতা তৈরির জন্য বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সংস্থার অংশগ্রহণকারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ভিত্তিক মডেলটি ইনস্টল এবং ব্যবহার করতে তাদের উৎসাহ প্রকাশ করেন তিনি।

কর্মশালায় জানানো হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জাতীয় কৌশল (এআই) বিবেচনা করে, সুপার কনসোর্টিয়াম প্রকল্প, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে একটি এআই ভিত্তিক সমাধান কল্যাণপুর বস্তিতে অধ্যয়ন, পাইলটিং তৈরি করেছে যা আগুন আগাম শনাক্ত করতে এবং জলাবদ্ধতার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।

ব্যবসায়িক ও শহুরে সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্যোগে সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য ইউরোপীয় সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশনস (ইকো) এর অর্থায়নে স্ট্রেন্দেনিং আরবান পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স (সুপার) প্রকল্পটি একটি কনসোর্টিয়াম প্রকল্প।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইডের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।