ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৩
লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য

বরিশাল: নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নিচে বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রং-তুলির আঁচরে।

তাই যেন সৌন্দর্যমণ্ডিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও উজিরপুর উপজেলার সাতলার এ লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এমন সময়টাতে সপ্তাহের সাত দিনেই ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে বিস্তীর্ণ লাল শাপলার বিল এলাকা। যে বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। তবে এখানে যে শুধু লাল শাপলা বা প্রকৃতির সবুজ রংয়ের সমারোহই ঘটেছে এমনটাও নয়, এখানে লাল শাপলার মাঝেই দেখা মিলছে সাদা শাপলা, সাদা বক, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

আরিফুর রহমান নামের এক পর্যটকের মতে, এ শাপলার বিলে ঘুরে যে কেউ চিরচেনা বাংলার এক অপরূপের দেখা পাবে। তবে এ রূপ দেখতে হলে অবশ্যই ভোরের সূর্য ওঠার আগে সেখানে থাকতে হবে। কারণ ভোরে প্রকৃতি যেভাবে তার রূপ মেলে ধরে সেটি আর গোটা দিনেও উপভোগ করা যাবে না।

সনিয়া নামের এক তরুণী বলেন, এটা একটি অন্যরকম জায়গা। বিলের পাশ ধরে এগিয়ে চলা সড়কে দাঁড়িয়ে যতদূর চোঁখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দেবে। আর বিলের পানিতে নৌকা নিয়ে এগিয়ে চললে দেখা মিলবে লাল আর সাদা শাপলার সঙ্গে বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, দোয়েল, শালিক, মাছরাঙাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, শোনা যাবে তাদের কলকাকলি। এছাড়া দেখা মিলবে মৌমাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোঁকামাকরও। এ যেন এক স্বর্গপুরী, যার চারিদিক শিল্পীর নিপুন হাতে আকা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে।  

স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষার ছয় মাস নিচু জমিতে কখনও হাটু আবার কখনও কোমর পানি থাকে। আর এতেই প্রকৃতির এই দান লাল শাপলা ফোঁটে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিলে শাপলা বেশি থাকে। দুর্গাপূজার আগ পর্যন্ত অনেকে এ শাপলা তরকারি হিসেবে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত প্রায় দুই মাস শাপলা বিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হয়।  

তবে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে মেলে ধরে লাল শাপলাগুলো আবার সূর্য মাথার ওপর উঠতেই ধীরে ধীরে নিজেকে আবার গুটিয়ে নেয়। আর তাইতো শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে সূর্য প্রখর হওয়ার আগে। প্রকৃতির নিয়মকানুন যারা জানেন বা বোঝার চেষ্টা করেন, তারাই শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে ভোরেই হাজির হয়ে যান বিলে। ছোট ছোট নৌকায় করে বিলজুড়ে ঘুরে বেড়ানোই এখানে আনন্দ যোগায়।  

স্থানীয় বাসিন্দা সমীরন বলেন, বরিশাল নগর থেকে সড়কপথে এ শাপলার বিলের দূরত্ব দুদিক থেকে দুরকম। নগরের নথুল্লাবাদ থেকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট হয়ে শাপলার বিলে যেতে চাইলে ৬১ কিলোমিটার পথ। আর উজিরপুর পৌর শহর ও হারতা হয়ে বিলে যেতে চাইলে ৫১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। এজন্য বেশিরভাগ পর্যটক বরিশাল থেকে ভোরই নিজেদের মোটরসাইকেল, গাড়ি নয়তো, ভাড়া করা থ্রি-হুইলার, প্রাইভেটকার, মাইক্রাবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। অনেকে আবার উজিরপুর কিংবা আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে এসেও রাত কাটান। তবে আত্মীয়-স্বজন না থাকলে শাপলার বিলের আশেপাশে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই।

যদিও বিশ্রামাগারসহ পাবলিক টয়লেটের অভাবে পাশাপাশি বিলে যেতে বেশকিছু সড়কের বেহাল দশা কিছুটা কষ্টও দিচ্ছে পর্যটকদের। তবে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফেসবুকে ও ইউটিউবে লাল শাপলার অনেক ছবি ও ভিডিও দেখে ঘুরতে আসা তরুণ রাকিব বলেন, বিলের পানিতে নৌকায় ভেসে বেড়াতে খুবই ভালো লেগেছে, বার বার এখানে ঘুরতে আসারও ইচ্ছে রয়েছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে আসতে চাইবেন না। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব দ্রুতই উন্নয়ন জরুরি।  

সাতলার শাপলার বিলের মাঝি ফাইজুল মিয়া বলেন, শাপলা বিলে নামার জন্য কোথাও কোনো ঘাট নেই, নেই যাত্রী ছাউনি ও টয়লেট। সাতলাতে বিশ্রামাগার বানানো হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়া যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির অবস্থাও ভালো না। এসবকিছুর উন্নয়ন হলে কৃষি ও মৎস্য নির্ভর এ অঞ্চল হবে পর্যটন বান্ধব।  

এ বিষয়ে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, সাতলা ইউনিয়নে প্রায় ১১ শ’ একক জমি নিয়ে তিনটি শাপলা বিলের স্পট রয়েছে। রাস্তা সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে আশা করি খুব শিগগিরই সংস্কার কাজ শেষ হবে। তবে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্মুক্ত করাসহ টয়লেট ও যাত্রী ছাউনিসহ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।  

আর বরাদ্দ পেলে শাপলা বিলকে আরও পর্যটক বান্ধব করে গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ওয়াশব্লকসহ একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আরও বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে। আর পর্যটকরা যে সড়ক ব্যবহার করেন সে সড়ক সংস্কারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৩
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।