ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হরতাল-অবরোধ নয়, খেয়ে পরে বাঁচতে চাই

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
হরতাল-অবরোধ নয়, খেয়ে পরে বাঁচতে চাই

চাঁদপুর: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। চতুর্থ দফায় অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি।

এসব হরতাল-অবরোধ নিয়ে চাঁদপুরের সাধারণ খেটে খাওয়া অধিকাংশ শ্রেণীপেশার লোকজন বলেন-আমরা খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই।  

সরকার আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুক। নাগরিক অধিকার নিয়ে যদি কেউ আন্দোলন করে, তাহলে আন্দোলন করাটা যৌক্তিক এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের গত কয়েক দফা হরতাল ও অবরোধের কারণে কি ধরনের প্রভাব এবং বিভিন্ন পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বললে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা কখনই হরতাল অবরোধ চাই না। কারণ হরতাল-অবরোধ থাকলে ঘাটে গাড়ি আসে কম। আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। স্বাভাবিক সময় ৮-১০ হাজার টাকার বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি নেমে এসেছে ৪ হাজার টাকায়।

এই ঘাটের ফল বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, অবরোধ ছাড়া প্রতিদিন বিক্রি হত ১৫০০ টাকা। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকা। অবরোধ দিলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের আন্দোলন দরকার নেই। খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই।

ঘাটে অলস বসে আছেন দুইজন অটোবাইক চালক। দুজনের বাড়ি চান্দ্রা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া গ্রামে। এর মধ্যে মো. পারভেজ জানালেন তার সারাদিনে রোজগার হয়েছে ৫০০ টাকা। আরেকজন সৈকত পাঠান। তিনি সকাল ৮টায় নেমে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোজগার করেছেন মাত্র ১৫০ টাকা।

ঘাটের মুদি দোকানদার মঞ্জিল মাঝি ক্ষোভ নিয়ে বললেন, আমরা কোনো আন্দোলন চাই না। দেশ ভালোভাবে চলবে এটাই আমাদের আশা। কারণ এমনিতে কেনাবেচা খুবই কম। এরপর অবরোধ হলে কোনো গ্রাহকই আসে না। গাড়ি বন্ধ থাকলে অন্য জেলার মানুষ আসার সুযোগ থাকে না। ভয়ে মানুষ মূল্যবান গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে চায় না।

চট্টগ্রাম থেকে খুলনা যাওয়ার জন্য রডের ট্রাক নিয়ে ঘাটে এসেছেন চালক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আজ ভোরে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়েছি। লক্ষ্মীপুর এসে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের সামনে পড়েছি। পরে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়েছি। অবরোধে নামলে খুবই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়।

সদরের চান্দ্রা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজারের ফল ব্যবসায়ী আহমদ উল্যাহ, হোটেল ব্যবসায়ী দেলু রাড়ী জানালেন একই ধরনের কথা। তারা বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমরা হরতাল অবরোধ চাই না। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। যে আন্দোলন আমাদের পেটে লাথি দেবে, সেই আন্দোলন আমাদের প্রয়োজন নেই।

সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের ফুচকা বিক্রেতা মো. জসিম ভুঁইয়া বলেন, অবরোধ হলে লোকজন বাড়ি থেকে কম বের হয়। যে কারণে বিক্রি অনেকাংশে কম হয়।

ফরিদগঞ্জ ও সদরের সীমান্ত এলাকার বাগড়া বাজারের অটোরিকশা চালক ফারুক মজুমদার বলেন, অবরোধের কারণে আমাদের অনেকটা অবসর সময় কাটাতে হয়। যাত্রীর চাইতে গাড়ির সংখ্যাই বেশি।

সদরের বাগাদী ইউনিয়নের চৌরাস্তা মোড়ে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. খোকন গাজী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বসে আছি এখানে। কোনো যাত্রী পাইনি। তিনি বলেন-দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন আছে। কারণ সরকার কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

একই এলাকার প্রবীণ ব্যবসায়ী মতিন খান বলেন, বিগত ১৫ বছরে আমি নিজের ভোট দিতে পারিনি। এই বয়সে আর ভোট দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। ভোটের অধিকারের জন্য হরতাল-অবরোধের দরকার আছে।

চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী রফিকুজ্জামান রনি জানান, হরতাল অবরোধে আদালতের কার্যক্রম চলমান আছে। তবে যাদের মামলাগুলোতে আসা খুবই জরুরি তারাই আদালতে আসেন। জরুরি ছাড়া বাকি মামলার সংশ্লিষ্ট লোকজন এখন কিছুটা কম আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।