ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ের এক পাশে আনন্দ অন্যদিকে উদ্বেগ-সংশয়

অপু দত্ত ও কৌশিক দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
পাহাড়ের এক পাশে আনন্দ অন্যদিকে উদ্বেগ-সংশয়

খাগড়াছড়ি: চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, চাক, ম্রো, বম, রাখাইন ও তংচঙ্গ্যা। পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে এমন বহু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস।

বছরের এই সময়টা পাহাড়ের এসব জনগোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন নামে নিজেদের প্রধান সামাজিক উৎসব পালন করে থাকে। নিজস্ব ধর্মীয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে পূর্ণ নানান আয়োজনে পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে তারা মেতে থাকে আনন্দে। তবে এবারের চিত্র উল্টো!

সপ্তাহখানেক ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি নানান আয়োজনে উৎসবের নগরে পরিণত হলেও বিপরীত চিত্র বান্দরবানে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পুরো দেশের দৃষ্টি এখন বান্দরবানে। সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের অপতৎপরতায় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আতঙ্ক-উদ্বেগ ছড়িয়েছে বান্দরবান শহরে। চলছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান। উৎসব তো নয়; এখন সেখানকার বাসিন্দারা নিরাপদে থাকতে পারলেই যেন খুশি!

আগামী ১২ এপ্রিল ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হবে ক্ষৃদ্র জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। বৈসাবি তিনটি জনগোষ্ঠীর উৎসবের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে তৈরি। বৈ-তে ত্রিপুরাদের বৈসু, সা-তে মারমাদের সাংগ্রাই ও বি-তে চাকমাদের বিজু উৎসবকে বোঝায়। এর বাইরে অন্য জনগোষ্ঠীরও রয়েছে আলাদা উৎসব। ভিন্ন ভিন্ন নামে উৎসব পালন করে থাকেন। এই উৎসব দেখতে সমতল থেকে পর্যটকরা পাহাড়ে ভিড় করেন।

ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বৈসু উৎসব উপলক্ষে বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি শহরে র‌্যালি হয়েছে। এতে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের হাজারো মানুষ নেচে-গেয়ে অংশ নেন। র‌্যালির উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। এসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মুক্তা ধরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রাঙ্গামাটিতেও এমন আয়োজন হয়েছে।  

খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির মতো বান্দরবানেও বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে নানান আয়োজন থাকে। বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কুচি-চিনের থানচি ও রুমায় ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে জেলাজুড়ে।

অনেকে উৎসবের চেয়ে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের মতে, উৎসবের চেয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফেরানো গুরুত্বপূর্ণ।

বান্দরবানের মারমা জাতিগোষ্ঠীর সংগঠক অং চ মং বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো যেহেতু শহরের বাইরে ঘটেছে তাই আমরা আশা করছি শহরের উৎসব তার রেশ পড়বে না।

বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি মং মং সিং বলেন, থানচি ও রুমা বা আশপাশের এলাকায় কতটুকু উৎসব উদযাপন হবে তা বলা কঠিন। তবে আমরা প্রশাসনসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সবার মতামত নিয়ে বান্দরবান শহরে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করবো। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে সব শেষ করতে পারবো। আগামী ১৩ এপ্রিল সাংগ্রাই র‌্যালি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ঈদ, নববর্ষ ও বৈসাবি ঘিরে প্রতি বছর বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক আসে। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করেছি। স্বাভাবিকের চেয়ে এবার নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয়রা যেন সুন্দরভাবে উৎসবে অংশ নিতে পারে এবং পর্যটকরা যেন নিরাপদে ঘুরতে পারে সেটি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০২৪
এডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।