ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৌসুমি ফলে বাজার সয়লাব, দামে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
মৌসুমি ফলে বাজার সয়লাব, দামে অসন্তুষ্ট ক্রেতারা

ঢাকা: মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শেষ হয়ে প্রকৃতিতে আষাঢ় এলেও মৌসুমি ফলের কমতি নেই বাজারে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলে সয়লাব রাজধানীর বাজারগুলো।

তবে এবার দেশি ফলের দামে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা।

শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের পর এখনো বাজার পুরোপুরি জমে না উঠলেও সব ধরনের দেশি ফলই পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে এখন আমের ভরা মৌসুম চলায় প্রায় প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। লিচুর মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় গুটি কয়েক দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে রসালো এই ফল। এছাড়া আছে জাম, কাঁঠাল, জামরুল।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে মান ও আকার ভেদে প্রতি কেজি ল্যাংড়া আম ১২০-১৩০ টাকা, হাড়িভাঙ্গা ৯০-১০০ টাকা, হিমসাগর ১২০-১৪০ টাকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ১৫০-২৫০ টাকা, আম্রপালি ১২০-১৫০ টাকা, ফজলি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁঠাল আকার ভেদে ৮০-৩০০ টাকা, জাম প্রতি কেজি ২০০-৩৫০ টাকা, জামরুল ১৪০-২০০ টাকা, ঢেউয়া ২৬০ টাকা, আমলকি ১০০০ টাকা, বেল প্রতি পিস ১২০-৩০০ টাকা, চায়না লিচু প্রতি ১০০ পিস ৬০০-৮০০ টাকা, বোম্বাই লিচু ৬০০-৭৫০ টাকা, জাম্বুরা প্রতি পিস ৮০-১২০ টাকা, ডাব প্রতি পিস ৬০-১০০ টাকা, আনারস ২০-৬০ টাকা, লটকন প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকা, সবরি কলা প্রতি ডজন ১০০ টাকা, চম্পা কলা ৭০ টাকা, বাংলা কলা ১০০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে।

মৌসুম অনুসারে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম বেশি দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে ফলন ও সরবরাহ কম হওয়াকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা।

আবুল কালাম নামের কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, এবার আম, জাম, লিচুর মতো দেশি ফলের ফলন কম হয়েছে। তার ওপর ঝড়-বৃষ্টি ও তাপদাহের কারণে অনেক ফল নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে দেশি ফলের যে চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। তাই দামও বেশি।

আমিনুল হক নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, অন্যান্য বছর এই সময় বাজারে যে পরিমাণ আম ঢোকে, এবার তার তুলনায় আম অনেক কম আসছে। তাই দাম বেশি। আর বাজারে সব কিছুরই তো দাম বেশি, ফলের দাম কম হবে কীভাবে? ফল আনা নেওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে, শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। এগুলো কম থাকলে ফলও কম দামে পাওয়া যেতো।

ফলের দাম বেশি হওয়ার পেছনে বিক্রেতারা নানা কারণ দেখালেও সেটি মানাতে রাজি নন ক্রেতারা। তাদের দাবি, বিক্রেতারা অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফলের দাম বাড়িয়েছে।

কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসা খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা অভিষেক শুভ্র বলেন, অন্যান্য বছর এই সময় ৬০-৭০ টাকা করে ভালো আম পাওয়া যেতো। কিন্তু এই বছর একটু ভালো মানের আম ১৩০-১৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আমের ফলন হয়তো কিছুটা কম হয়েছে। তাই বলে এত দাম হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অন্যান্য বছর কারওয়ান বাজারে কম দামে আম পাওয়া যেতো। এবার কারওয়ান বাজারে যে দামে আম বিক্রি হচ্ছে, খিলগাঁওয়েও একই দামে আম বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর একটি ফলের জুসের দোকান রয়েছে নাখালপাড়ার বাসিন্দা সজীবের। জুসের দোকানের জন্য ফল কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছেন তিনি। সজীব বলেন, এ বছর সব ফলের দামই বেশি। ফলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু চাইলেই জুসের দাম হুট করে বাড়ানো যায় না। এভাবে ফলের দাম বাড়তে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ব্যবসা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম অনেক বেশি। আমরা যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা দামের কারণে বিদেশি ফল খেতে পারি না। মৌসুমি দেশি ফল খেয়েই ফলের চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু দেশি ফলেরও যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে হয়তো ফল খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে।

এদিকে সারা বছর বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া বিদেশি ফলের দাম ঈদের আগে আরও এক দফা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি নাশপতি ২৫০-২৬০ টাকা, মাল্টা ২৩০-২৪০ টাকা, গালা আপেল ২৮০-৩০০ টাকা, ফুজি আপেল ২০০-২৬০ টাকা, কালো আঙুর ৫৫০ টাকা কেজি, আনার ৫৩০ টাকা, চায়না কমলা ৩২০ টাকা, সাদা আঙুর ২০০ টাকা, ড্রাগন ফল ১৪০-২০০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।