ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মানিকগঞ্জে বিলুপ্তির পথে জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
মানিকগঞ্জে বিলুপ্তির পথে জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু

মানিকগঞ্জ: আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু। শুধু জনপ্রিয় খেলা নয় এটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলাও বটে।

তবে কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় চিরচেনা প্রাচীনতম এ খেলাটি আজ প্রায় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।  

আবাল বৃদ্ধ বনিতার রোমাঞ্চ উপভোগের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু। বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে এই খেলাটি এখন শুধু ঐতিহ্য বহনকারী হিসেবে পরিণত হয়েছে।  

চিরচেনা এ খেলার প্রাণ ফেরাতে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখরীনগর আই সি এম কৃষক ক্লাবের উদ্যোগে ষাটোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের নিয়ে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হয়। এত খেলোয়াড়েরা মাঠে তাদের আগের সেই নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন।  

জানা যায়, ষাটোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের নিয়ে ব্যতিক্রমী এই খেলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সদর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন থেকে কয়েক শতাধিক মানুষ ছুটে আসে ঐতিহ্যের খেলাটি উপভোগ করতে। মাঠে দেখা যায়, দুটি দল সম ভাগে খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামেন, প্রথম ধাপে তিনটি ও দ্বিতীয় ধাপেও তিনটি করে মোট ছয়টি খেলা হয়। আব্দুল লতিফ ও রশিদ সরকার একাদশ দীর্ঘ সময়ের এই খেলায় দুটি দল সমন ভাবে পয়েন্ট অর্জন করে এবং নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। খেলায় অতিরিক্ত সময়েও পয়েন্ট সমান হওয়ায় জাজমেন্টে থাকা বিচারকগণ দুটি দলকেই যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

অপরদিকে নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে খেলাটি ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।

ষাটোর্ধ্ব আব্দুল লতিফ একাদশের দলপতি বলেন, আমরা যুবক ছিলাম, গ্রামীণ খেলার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ছিল হা-ডু-ডু। যখন কোনো গ্রাম-পাড়া মহল্লায় এ খেলার আয়োজন করা হতো তখন এই খেলা নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হতো।

ওই সময়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আমাদের বলতেন, ভালো খেলতে হবে, বিজয়ী হতে হবে, পুরস্কার নিয়ে গ্রামে ফিরতে হবে। এবং তারা সব ধরনের সহযোগিতা করতেন আমাদের। আর বিজয়ী হলে আশেপাশের গ্রাম থেকে খেলোয়াড়দের দেখতে আসতেন কিন্তু আজ জনপ্রিয় এ খেলাটি হারিয়ে যাচ্ছে।  

রশিদ সরকার একাদশের দলপতি বলেন, আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের খেলাটি আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে খেলাটিকে ফিরিয়ে আনতে আমরা ষাটোর্ধ্ব খেলোয়াড়েরা পুনরায় এই খেলার আয়োজন করেছি।

খেলা দেখতে আসা একাধিক তরুণ-যুবকরা বলেন, হা-ডু-ডু খেলার সম্পর্কে শুনেছি। তবে এ খেলায় অনেক আকর্ষণ রয়েছে। সেটা আমরা বুঝিনি। আমাদের ঐতিহ্যের এ খেলাটিকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে আমরা উদ্যোগ নেব।  

হা-ডু-ডু খেলার মাঠের বিচারক (অ্যাম্পিয়ার) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, খেলাটি ছোট বেলায় দেখেছি তবে তেমন একটা খেলেনি। আজ সেই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি মাঠের বিচারক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্বিত আমি। দুটি দল অনেক ভালো খেলেছে, নির্ধারিত সময়েও তারা সম-পয়েন্ট অর্জন করে। খেলাটির অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও পূর্বের ন্যায় পয়েন্ট অর্জন করে। ফলে বিচারক কমিটি তাদের দুটি দলকেই যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

শেখরীনগর আই সি এম কৃষক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই হারিয়ে যাওয়া খেলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমরা এই আয়োজনটি করেছি। কোনো ধরনের প্রচার ছাড়া, শুধু মাত্র লোক মুখে শুনে শত শত মানুষ এই খেলাটি উপভোগ করতে ছুটে এসেছে। নতুন প্রজন্মের মাঝে খেলাটি ফিরিয়ে আনতেই ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

সাটুরিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পিন্টু বলেন, ছোট বেলায় খেলাটি আমরা বেশ উপভোগ করেছি। তবে এখন আর আগের মতো খেলাটির আয়োজন দেখা যায় না। ছোট্ট একটি গ্রামের হা-ডু-ডু খেলা দেখতে এত দর্শক হবে সেটা আমরা ভাবিনি। ঐতিহ্যবাহী খেলাটিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমিসহ আমরা কাজ করে যাব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।