ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ৮

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২৪
আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ৮

কুষ্টিয়া: আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে ৮ জন নিহত এবং অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় শতাধিক মানুষ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

সোমবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।

বেলা ১টার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ।

পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

এরপর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে থানার ভেতরের সমস্ত আসবাবপত্র ও জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০ টি মোটরসাইকেল ভস্মীভূত হয়।

পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।  

এদিকে, বেলা ২টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি গ্রুপ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ঢুকে পড়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।  

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহতদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।  

এদিকে, বেলা ২টার পর পরই হাজার হাজার জনতা কুষ্টিয়া শহরে নেমে এসে উল্লাস করতে থাকেন। অনেকে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ কেউ মিষ্টিও বিতরণ করেন।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাই তাইজাল আলী খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাংসদ কামারুল আরেফিন সহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে।

সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২৪
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।