ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামীর বাড়িতে পানি, বাপের বাড়িতেও পানি, কই যামু?

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
স্বামীর বাড়িতে পানি, বাপের বাড়িতেও পানি, কই যামু?

লক্ষ্মীপুর: গৃহবধূ রাবেয়া বেগম তার সহায় সম্বল নিয়ে বন্যার পানি মাড়িয়ে ভ্যানে চেপে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে যাচ্ছেন। সঙ্গে চার বছরের কন্যা শিশু, কয়েকটি হাঁস আর একটি ছাগল।

অথৈ পানির ভেতর দিয়ে ভ্যানটি টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার স্বামী আলমগীর।

স্বামীর বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভাঙাখাঁ ইউনিয়নের জাগিদার বাড়ি। আর বাপের বাড়ি পাশের ইউনিয়ন মান্দারীর যাদৈয়া গ্রামের ওসমান হাজী বাড়ি।

রাবেয়ার স্বামীর বাড়ি এবং বাবার বাড়িতে কোমর পানি। কোথাও উঁচু জায়গা নেই। এরপরেও স্বামী বাড়ি থেকে চলে গেছেন বাপের বাড়ি।

রাবেয়া বলেন, আমার শ্বশুরবাড়িতে পাঁচ পরিবার। সবাই পানির নিচে। থাকার ব্যবস্থা নেই। বাপের বাড়ির দিকে যাইতেছি, সেখানেও পানি। কোনো অবস্থা নেই। তাই সন্তান, হাঁস-মুরগি, ছাগল নিয়ে বাপের বাড়ির দিকে যাচ্ছি। মরলে একসাথে মরবো, কি আর করা! কোনোদিকে উঁচু জায়গা নেই। আশ্রয় কেন্দ্রও খালি নেই। সব জায়গার মধ্যে মানুষ আর মানুষ।

রাবেয়ার মতো এরকম লাখ লাখ মানুষ বন্যার পানিতে আটকা পড়েছেন। কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন, কেউ আবার আত্মীয়ের বাড়িতে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, জেলার শতভাগ এলাকা এখন বন্যাকবলিত। প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। আটকাপড়া বাসিন্দাদের মধ্যে অসুস্থ রোগীও রয়েছে।

মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের অটোরিকশাচালক সিরাজ মিয়ার স্ত্রীর ডায়রিয়া। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা নেই। তাই অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।

বলেন, পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি। আমার স্ত্রী অসুস্থ, ডায়রিয়া। তাকে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিজে অটোরিকশাচালক হয়েও আমার গাড়িটি পানির কারণে চালাতে পারছি না। এলাকায় নৌকা বা অন্য কোনো উপায় নেই, স্ত্রীকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার জন্য।

এদিকে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর চুলা জ্বলে না। ত্রাণও পৌঁছায়নি অনেকের ঘরে।

সদর উপজেলার যাদৈয়া গ্রামের ভুঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, পানির উঠে গেছে ঘরের মধ্যে। থাকতে পারি না। অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। আমার স্বামী নাই, কামাই করার লোকও নাই। কেউ আমার খোঁজও লয় না, ত্রাণও পাইনি।

একই বাড়ির বাসিন্দা পাখি বেগম বলেন, ঘরে পানি আছে, কিন্তু খাবার নেই। চারিদিকে পানি। বড়ই কষ্টে আছি। কোনো সহায়তা পাইনি।

ওই এলাকার ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি বলেন, বাড়িতে বুক পরিমাণ পানি। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা নেই। তাই পরিবারের লোকজন নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি।

যাদৈয়া গ্রামের এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঘরে কিছু নাই, পানি উঠে সব নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে কোমর পানি। আজ ১০ দিন ধরে পানিবন্দি ছিলাম। সবশেষে দুইচালা টিনের ঘরটি পড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ির দিকে যাচ্ছি। সেখানেও পানি। কেউ খবর নেয় না। বাড়ির মানুষও জিগ্যেস করে না। সবার অবস্থা খারাপ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।