ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবরে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
অভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবরে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন

ঢাকা: জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় ২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ২২৭ জন এবং এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন দুইজন।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেঙ্গলি মিডিয়াম হাই স্কুলে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় এই তালিকা প্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলন। ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মোহাম্মদপুর-আদাবর অঞ্চলে আহত-নিখোঁজ ও শহীদদের তালিকা প্রকাশ ও স্মরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানা।

লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার সংগঠক ফাইয়াজ ফিরোজ বলেন, ৬৯, ৭১ এবং ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও নিশ্চুপ-নিষ্ক্রিয় ছিলেন না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার যে প্রতিরোধ, তার মধ্যে মোহাম্মদপুর ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম একটি স্পট। এখানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কারফিউ ভেঙে ছাত্র-জনতার ঢল রাজপথে নামে। বসিলা সড়ক থেকে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড হয়ে টাউন হল পর্যন্ত এবং ওদিকে রিং রোড থেকে শ্যামলী পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, ছাত্র-জনতার এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ, র‍্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডাররা নিরস্ত্র মানুষের ওপর নিবিচারে গুলি চালায়। এমনকি পুলিশ আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোড়ে।  

আন্দোলনে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে ফাইয়াজ ফিরোজ বলেন, আপনারা হয়তো ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ দেখে থাকবেন, ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ ও সাবেক কমিশনার তারিকুজ্জামান রাজিব, ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এপিএস সরাসরি ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়।

তিনি আরও বলেন, নিরস্ত্র জনগণের ওপর এই গুলিবর্ষণ এবং সশস্ত্র হামলার ফলে মোহাম্মাদপুর, আদাবর এবং বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর মানুষ আহত, নিহত এবং নিখোঁজ হয়। আমাদের কাছে তালিকাভুক্তির ফলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত, ২২৭ জন আহত এবং দুজন নিখোঁজ ব্যাক্তির তালিকা করতে পেরেছি। এই তালিকা ডিজিটালাইজেশনের কাজও চলছে। আগামী সপ্তাহে সাপোর্টিং ডকুমেন্টসসহ এই তালিকা সামারি করে স্বরাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ সময় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাত দফা দাবিও তুলে ধরেন ফাইয়াজ ফিরোজ। দাবিগুলো হলো-

১। এই হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।
২। নিহতদের শহীদের মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া।
৩। নিখোঁজদের সন্ধান বের করার জন্য যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া।
৪। আহতদের রাষ্ট্রীয় খরচে যথাযথ সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৫। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিহত, নিখোঁজ এবং গুরুতর আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া।
৬। শহীদদের স্মরণে মোহাম্মাদপুরের রাস্তাগুলির নামকরণ করা।
৭। রাষ্ট্রীয় খরচে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে, মোহাম্মাদপুর বাস-স্ট্যান্ডে, শিয়া মসজিদ মোড়ে এবং শ্যামলী মোড়ে শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা।

গণসংহতি আন্দোলনের মোহাম্মদপুর-আদাবর থানার আরেক সংগঠক হাসান আল মেহেদীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, গণসংহতির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, সদস্য সচিব মাহবুব উদ্দিন রতন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া।

স্মরণ সভায় গণঅভ্যু্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিচারণ করেন এবং আহতরা তাদের ওপর হামলার বর্ণনা দেন। এ সময় তারা এই হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
এসসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।