ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিল ডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে দিশেহারা স্থানীয়রা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
বিল ডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে দিশেহারা স্থানীয়রা এক নারী নৌকায় চলাচলে ব্যস্ত

খুলনা: এক সময়ে খুলনার বিল ডাকাতিয়া কৃষিজীবী মানুষের আশীর্বাদ ছিল। এ বিলে ধান, সবজি ও মাছ উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে।

জলাবদ্ধতায় এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না। এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। চলাচলের একমাত্র উপায় ডিঙি নৌকা।

জানা গেছে, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া এবং যশোর জেলার অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা নিয়ে বিল ডাকাতিয়ার বিস্তৃতি। এতে চাষাবাদযোগ্য ৩০ হাজার একর জমি রয়েছে। ভয়াবহ জলাবদ্ধতা আর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে তলিয়ে গেছে বিলের জমি। মাছচাষিদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে।  

পরিস্থিতি এমন যে, বিল ডাকাতিয়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবি এখানকার মানুষের।

স্থানীয়রা জানান, তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বছরের অধিকাংশ সময় থাকে জলাবদ্ধতা। এর ওপর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলেই বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পানিতে তলিয়ে যায় মাঠ-ঘাট, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাছের ঘের, ধান-সবজির জমি। সেই সঙ্গে তলিয়ে যায় বসতবাড়িগুলো।  

বর্তমানে অনেকের ঘরের ভেতরে এক ফুটের মতো পানি রয়েছে। ঘরের চারপাশে এখনো হাঁটুপানি। অনেকটা ঘরবন্দি সময় কাটছে তাদের। শুকনো খাবার, চিড়ে-মুড়ি, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের। শ্রমজীবীদের আয়-রোজগার বন্ধ। এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।

ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের বাসিন্দা লিটন শেখ বলেন, রংপুর বিল ডাকাতিয়ার এ অংশে আমরা ১৪ মুসলমান পরিবার বসবাস করি। গত ৮-১০ দিন ধরে আমরা পানিবন্দি। আমার বাড়িতে মাজা সমান পানি। ঘরে থাকতে পারছি না। স্ত্রী, ছোট দুই সন্তান নিয়ে দিনে রাস্তার পাশে সাঁকোর ওপর উঁচু জায়গায় সময় কাটাচ্ছি। রান্না-বান্না, খাওয়া দাওয়া অনিশ্চিত।  

তিনি বলেন, বাইরে থেকে শুকনো খাবার কিনে খাইয়ে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। গরু-ছাগল নিয়েও খুব দুর্ভোগ। টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। খাবার পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আশেপাশে  সবার একই অবস্থা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পানি যাওয়ার খালগুলো সব বন্ধ হয়ে আছে। কী করব, ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছি না। সরকারিভাবে আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি।

রংপুর গ্রামের দীপক সরকার বলেন, রংপুরের মানুষ, ডাকাতিয়ার বিলের মানুষ, আমরা বড় কষ্টে আছি। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।

তেলিগাতী গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখানে যারা মাছ চাষের ওপর নির্ভরশীল, আমরা সবাই পানিতে প্লাবিত। অনেক ক্ষতি হইছে। হাজার হাজার হেক্টর জমির মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বিল ডাকাতিয়ায়। শৈলমারি গেট থেকে পানি বের করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছি। ঘেরের আইলে থাকে সবজি আর ঘেরে থাকে মাছ। বেশি বৃষ্টিতে সবজি ও মাছের ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় এলাকার মানুষ আছে সীমাহীন কষ্টে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪
এমআরএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।