ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঋণের টাকা শোধ না করতে ভায়রাকে হত্যা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
ঋণের টাকা শোধ না করতে ভায়রাকে হত্যা

রাজশাহী: মারা গেলে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে না, এমন ভাবনা থেকে ভায়রা ভাইকে হত্যা করেছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা রায়হান আলী (৪০)।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে বাঘা থানার আমলী আদালতে ভায়রা ভাই আনিসুর রহমানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন রায়হান। এ ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দিনগত রাতে বাঘা উপজেলার মনিগ্রামের একটি আমবাগানে রায়হান তার বাকপ্রতিবন্ধী ভায়রা আনিসুর রহমানকে গলা কেটে হত্যা করেন। নিহত আনিসুর রহমান (৪৮) তুলশীপুর গ্রামের বাসিন্দা। আগের দিন বাজার গিয়ে আর রাতে বাড়ি ফেরননি আনিসুর। পরদিন সকালে ওই আমবাগান তার গলা কাটা মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর রায়হানকে আটক করা হলে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়। পরে তাকে আদালতে তোলা হয়।

রাজশাহীর জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চারঘাট-বাঘা সার্কেল) প্রণব কুমার জানান, নিহত আনিসুর রহমানের স্ত্রী পারভীনা বেগমের ছোট বোনের স্বামী হচ্ছেন রায়হান। রায়হান রডমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর্থিক সম্যসায় বিভিন্ন সময় আনিসুরের কাছ থেকে টাকা ধার করতেন। চার মাস আগে রায়হান ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান ‘গাক’ নামের একটি এনজিও থেকে আনিসুর ও তার স্ত্রী পারভীনা বেগমের নামে ৯০ হাজার টাকা ঋণ তোলেন। কারণ ওই এনজিওতে তিনি নিজের নামে আগে থেকেই ঋণ নিয়ে রেখেছিলেন। তাই দ্বিতীয় দফায় আনিসুরের মাধ্যমে ঋণের টাকা তোলেন। এরপর এনজিওর দুইটি কিস্তি বাবদ নয় হাজার টাকা দিতে গিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। এরমধ্যে বুধবার (২০ নভেম্বর) আবার পারভীনা বেগম পাঁচ হাজার টাকা ধার চান রায়হানের কাছে। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েন।  

এ অবস্থায় কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়ে রায়হান চরম বিপাকে পড়েন। পরে লোকমুখে শুনতে পান, ঋণগ্রহীতা দুজনের মধ্যে কোনো একজন মারা গেলে পুরো টাকা মওকুফ হয়ে যায়। আর এরপরই রায়হান তার ভায়রা ভাই আনিসুরকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন।

সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এর জন্য রায়হান বাজার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কেনেন। শুক্রবার ফোন করে ভায়রা ভাই আনিসুরকে মনিগ্রাম বাজারে ডাকেন পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য। কথামত বাজারে গেলে টাকা ধার দেওয়ার নাম করে রাতে আনিসুরকে বাজারের পাশের একটি আম বাগানে নিয়ে যান রায়হান। পরে কথা বলার এক ফাঁকে রায়হান পেছন দিক থেকে আনিসুরের গলায় ছুরি চালান। এতে আনিসুর ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত আনিসুরের স্ত্রী পারভীনা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। আর মরদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় রায়হানের কথায় গড়মিল পাওয়া গেলে তাকে আটক করা হয়। এরপর থানায় নেওয়া হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।