সিলেট: সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই যাত্রীর কাছ থেকে সাড়ে ১৭ কেজি স্বর্ণ জব্দসহ দুই যাত্রীকে আটক করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে এসব স্বর্ণ আটক করা হয়।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরের গ্রিন জোন চ্যানেল থেকে দুই যাত্রী স্বর্ণ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা পার্কিং থেকে দুই যাত্রীকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ১৭ কেজি স্বর্ণের চালান জব্দ করা হয়।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দায়িত্বরত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ইনজামাম-উল-হক সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আটক দুই যাত্রীর লাগেজে পৃথকভাবে টেবিল ফ্যান দুটি ও চার্জার লাইট রাখা ছিল। দুটি টেবিল ফ্যান ও দুটি চার্জার লাইটের ভেতরে চারটি বল ও ১২০ পিস স্বর্ণের প্লেটগুলো সাজিয়ে টেবিলে রাখে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
দুপুর ১টার দিকে স্বর্ণের চালান আটকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কাস্টমস ভ্যাট অ্যান্ড এক্সাইজ কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার তাসনিমুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে আসা দুই যাত্রী গ্রিন চ্যানেল পেরিয়ে যাওয়ার পর কনকর্ড হল চলে গেলে তাদের চ্যালেঞ্জ করেন জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা। দুটি ফ্যান ও দুটি চার্জার লাইটের কনসিল করে স্বর্ণের চালানটি তারা এনেছিল। এটা তারা মোডিফাই করে এনেছে। এটি বার হিসেবে ছিল না। পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলো আসল স্বর্ণ। মোট স্বর্ণের পরিমাণ সাড়ে ১৭ কেজির মতো। এটির প্রলেপ বাদ দিলে কিছুটা কমতে পারে।
তিনি বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টম, শুল্ক গোয়েন্দা, এনএসআই, এভিয়েশন ও অন্যান্য সংস্থা যারা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এর আগে ২০২৩ সালে ৪৩ কেজি ও ২০২৪ সালে ৩২ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। বিশেষ করে আজকের এ অর্জনটা সবার হলেও বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
স্বর্ণের চালান আটকে স্ক্যানিং মেশিনে ধরা না পড়া এবং চোরাই স্বর্ণের চালান আটকের কৃতিত্ব এনএসআইকে দেবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাস্টমস কাজ করে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে। মূলত আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন আছে। গত তিন মাসে তিনটি স্বর্ণের চালান ধরতে পেরেছি। স্ক্যানিং মেশিনে যা আসে, সেটার ভিত্তিতে যাচাই করা হয়। যাত্রীরা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে স্বর্ণের চালানটি এনেছে। ছোটখাটো চোরাচালানগুলো ধরা পড়ছে। বড় চালানগুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে চোরাকারবারিরা।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক হাফিজ আহমদ বলেন, এখানে যাত্রীরা কাস্টমস প্রক্রিয়া শেষ করে বেরিয়ে কনকর্ড হলে চলে যান। সেখানে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও শুল্ক গোয়েন্দা তাদের চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় তল্লাশির পর নিশ্চিত হন এবং দুই যাত্রী স্বর্ণের চালানসহ ধরা পড়েন। বিশেষ করে তারা কায়দা করে স্বর্ণের চালান নিয়ে আসাতে হয়তো প্রথম অবস্থায় ধরা পড়েনি। এটা তথ্যের ভিত্তিতে এবং সরাসরি যাচাইয়ের কারণে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
নিজে প্রতারণার স্বীকার দাবি করে আটক যাত্রী সায়েদ আহমদ বলেন, তিনি দুবাইয়ের ফজিরাতে চার বছর ছিলেন। এবারই প্রথম দেশে এসেছেন। আসার সময় টাকা ছিল না। যে কোম্পানিতে কাজ করি, তার বাইরে আরেকটি কোম্পানির এক ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করি, দেশে যাবো টাকা নেই। তখন তিনি প্রস্তাব দেন, দেশে গেলে স্বর্ণ দেবো, নেবে কিনা? ১০০ গ্রাম স্বর্ণতো নেওয়া যায়, ওই লোক বলে তোকে টিকিটও কেটে দেবে। যে লোক দেবে তাকে তিনি চিনতেন না। তখন তাকে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের দুজনকে ৬০ হাজার টাকার টিকিট কেটে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা দেশে যাওয়ার তারিখ জানতে চায়। আসার আগে তাকে ফোন কলে স্বর্ণ দেওয়ার কথা বললে তার রুমে যেতে বলেন। তখন টাকা ফেরতের কথা বললে ৫০০ দিরহাম দিয়ে দেন। বাকি টাকা দেওয়া লাগবে না জানিয়ে ওই লোক বলেন, তার বাড়ি সিলেটের আম্বরখানায়। তার ফ্যান, লাইট ও দরজার লকটি নিয়ে যেতে।
তিনি বলেন, দেশে আসার সময় ওই লোকের ভাইকে তার বাবা আম্বরখানার বাসা থেকে বিমানবন্দর নিয়ে আসেন, এগুলো রিসিভ করার জন্য। যখন আটকা পড়েন, তখন ওই লোককে ধরার কথা বললেও সংশ্লিষ্টরা তার কথায় কর্ণপাত করেননি। এছাড়া তার সঙ্গে আটক আফতাব উদ্দিনের ভাই সেখানে ওদের কাছে জিম্মি রয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
এনইউ/আরআইএস