ঢাকা: রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও জলাবদ্ধতা নিরসন এ তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ডিএনসিসির হলরুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
সভা শুরুর আগে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গুলশান নগরভবনের নিচতলায় প্রবেশপথের দেয়ালে স্থাপিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অমর স্মৃতি শিরোনামে ফটো গ্যালারি উদ্বোধন করেন। ফটো গ্যালারিতে ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ উপস্থাপন করা হয়েছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ঢাকার প্রতিদিনের লড়াই খুব কাছ থেকে জানি। এখানে আমাদের ফুসফুসে বিশুদ্ধ বাতাসের বদলে জমে কালো ধোঁয়া আর ধুলা। শহরে খেলার মাঠ থাকলেও খেলার সুযোগ নেই। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা বিশুদ্ধ পানির মতো সাধারণ প্রয়োজনীয় জিনিস যা আমাদের অধিকার এখনও হয়ে আছে বিলাসিতা। শহরের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী, কিন্তু শহর পরিকল্পনায় তারা উপেক্ষিত। শিশুদের জন্যও নিরাপদ ও উপযুক্ত শহর গড়ার পরিকল্পনা নেই।
তিনি আরও বলেন, ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য শহর করতে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে পরিবেশ যেন ভালো থাকে, বাতাস বিশুদ্ধ হয়, নদী-খালগুলো বাঁচে, সবার জন্য উন্মুক্ত জায়গা থাকে যেখানে শিশুরা খেলতে পারে, মানুষ হাঁটতে, বসতে পারে, রাস্তা, ড্রেনেজ, পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে কাজ করে।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওয়াসা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ডিএনসিসির উন্নয়ন কার্যক্রমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। স্থানীয় জনসাধারণের এবং সব অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে ডিএনসিসি।
অবৈধ ব্যানার-পোস্টার অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজপথ থেকে ব্যানার-পোস্টার অপসারণ করা হবে। পিভিসি ব্যানার সম্পূর্ণ নিষেধ, এটি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা জুলাই গ্রাফিতি রক্ষা করা হবে। পোস্টার-ব্যানার লাগালে জরিমানা করা হবে। এছাড়া ডিএনসিসি দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, মোহাম্মদপুরের বছিলায় হাইক্কার খাল উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিনে গিয়েছি। সীমানা নির্ধারণ ও উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। হাইক্কার খালটি আগের মতো রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানের মধ্য দিয়ে লাউতলা খাল ও রামচন্দ্রপুর খালের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে উত্তরখান এলাকায় গিয়েছি। তিনটি স্থানে সীমানা নির্ধারণ ও উচ্ছেদ করে একটি পার্ক, একটি খেলার মাঠ ও একটি কমিউনিটি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। পার্কটি নির্মাণ হবে তেরমুখ ব্রিজের পাশে। আমাইয়া, কাঁচকুড়ায় একটি মাঠ ও একটি কমিউনিটি কমপ্লেক্স নির্মাণ হবে।
ডিএনসিসির কার্যক্রম পরিচালনায় তিনটি অবৈতনিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বায়োডাইভারসিটি (জীববৈচিত্র্য) কমিটি, ডায়াসপোরা (প্রবাসী) কমিটি ও সাধারণ কমিটি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
এমএমআই/আরবি