ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ক্যাফের ম্যানেজার নিজেই আগুন লাগান একুশে টিভির নিচে

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
ক্যাফের ম্যানেজার নিজেই আগুন লাগান একুশে টিভির নিচে

ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ারের নিচতলায় অবস্থিত ‘পেয়ালা ক্যাফে’তে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ক্যাফেটির ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান রিমন (৩১) নিজেই লাগিয়েছেন সেই আগুন।

গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কারওয়ান বাজার থেকে রিমনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) তাকে চুরি, অগ্নিসংযোগ ও ক্ষয়ক্ষতি করার অপরাধে ‘পেয়ালা ক্যাফে’ কর্তৃপক্ষের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৮টার দিকে ‘পেয়ালা ক্যাফে’তে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নির্বাপন করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ক্যাফেটিতে আগুন লেগেছে ধারণা করা হলেও কারওয়ান বাজার স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় বিষয়টি সন্দেহ হয় তেজগাঁও থানা পুলিশের। বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্তে নামেন তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও অপারেশন (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. নাজমুল জান্নাত শাহ্। পরবর্তীতে ‘পেয়ালা ক্যাফে’র সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ক্যাফেটির ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান রিমন নিজেই টিস্যু ও পত্রিকা দিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের নিচে আগুন ধরিয়ে দেন। যা ছড়িয়ে পড়ে পুরো রেস্টুরেন্টে।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও অপারেশন (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. নাজমুল জান্নাত শাহ্ বাংলানিউজকে বলেন, রিমন অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। জুয়া খেলার জন্য সে ‘পেয়ালা ক্যাফে’র ক্যাশ থেকে ৮৫ হাজার টাকা চুরি করে নেয় এবং তা হেরে যায়। হেরে যাওয়া টাকা ফিরত না দিতে সে রেস্টুরেন্টে আগুন লাগার নাটক সাজায়।

তিনি আরো বলেন, ওই ভবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, ব্যাংক আছে। সবাই প্রথমে ধারণা করেছিল, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। পরবর্তীতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নির্দেশে ছায়া তদন্ত করে দেখা যায়, রিমন আলামত নষ্ট করতে পত্রিকা দিয়ে ক্যাশে আগুন লাগায়।

এই ঘটনায় রিমনের বিরুদ্ধে চুরি, অগ্নিসংযোগ ও ক্ষয়ক্ষতি করার অপরাধে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাদী হয়ে একটি মামলা করেন এমজিএইচ গ্রুপের ডিজিএম মো. মঞ্জুরুল আলাম খান। পেয়ালা ক্যাফে এই গ্রুপেরই একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। মামলায় ৮৫ হাজার টাকা চুরি ও আগুনে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ জানানো হয়।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. নাজমুল জান্নাত শাহ্ জানান, গ্রেপ্তারকৃত রিমন ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে নেওয়া হয়েছে।

এমজিএইচ গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার মো. শাহেদুর রহমান তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রিমন ‘পেয়ালা ক্যাফে’তে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করে। ঘটনার দুই-তিন দিন আগে থেকে সে ক্যাফের ক্যাশ জমা দিয়নি। তাকে ক্যাশ জমা দিতে বললে সে জানায় করে দিবে। প্রতি শনিবার আমাদের ওই ক্যাফেতে সার্ভিসিংয়ের কাজ করা হয়। ওইদিন সার্ভিসিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর সে টিস্যু, পত্রিকা দিয়ে ক্যাশের নিচে আগুন লাগিয়ে ক্যাফের দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী, ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার বেশি সে ক্যাশে জমা দেয়নি। কিন্তু সে পুলিশকে বলেছে ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া আগুনে আমাদের ক্যাফের প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এই বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা যাবে।

এই বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রিমনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আগেও অন্য একটি জেলায় চুরির মামলা রয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছর নোয়াখালীর মাইজদীতে ‘কাচ্চি ডাইন’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখান থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে যান মো. মেহেদী হাসান রিমন। এই ঘটনায় ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর সুধারাম মডেল থানায় একটি মামলা করে রেস্টুরেন্টটির কর্তৃপক্ষ। মামলা নম্বর ৪৫। এই ঘটনায় এতদিন রিমন পলাতক ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়াবি ১৮, ২০২৫
এসসি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।