ঢাকা, শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতরা কে কোথায় পালিয়ে, জানতে বিদেশি দূতাবাসকে চিঠি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতরা কে কোথায় পালিয়ে, জানতে বিদেশি দূতাবাসকে চিঠি

ঢাকা: তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তথ্যগত সহায়তা চেয়ে কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছে জন্য বেশ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি দিয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। বিডিআরের মধ্যে বিদ্রোহে জড়িতরা পালিয়ে কে কোথায় অবস্থান করছে, তা জানতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি এ ঘটনায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে তদন্ত কমিশন।

এর কারণ হিসেবে তদন্ত কমিশন বলছে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর অনেকে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তাদের অনেককেই এই বিডিআর বিদ্রোহ তদন্তে লাগবে। এই ব্যক্তিগুলো অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে যেখানেই থাকুক প্রয়োজন হলে, সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে যেন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত তদন্ত কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনাসদস্যসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন।

বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর বিদেশ গমনে তদন্ত কমিটির নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ঘটনার তদন্তে আমরা যাদের যাদের প্রয়োজন মনে করছি তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কারণ, যেকোনো সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন হতে পারে। জিজ্ঞাসা করার সময় যেন আমরা তাদেরকে সহজেই পাই সেজন্য বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা আমরা এই মুহূর্তে বলছি না। তারা রাজনৈতিক নাকি প্রশাসনিক লোক তাও স্পষ্ট করেননি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।

বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন বেশ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লেখা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি এখানে যাদের আমাদের প্রয়োজন তাদেরকে যেন আমরা ফেরত আনতে পারি।

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক সহায়তা, বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ। আপনারা আসলে কোন ধরণের বিদেশি দূতাবাস বলছেন? তারা কি এশিয়ার বা পার্শ্ববর্তী দেশের দূতাবাস? এ প্রশ্নের উত্তরে কমিশন সভাপতি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশে লুকিয়ে থাকেন, তার অবস্থান লোকেট করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা তো কঠিন বিষয়। এই বিষয়গুলো সময়সাপেক্ষ। কারণ, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন তাদের পাই। তিনি নির্দিষ্ট কোনো দূতাবাসের নাম অবশ্য বলেননি।

দূতাবাসগুলোকে সহযোগিতার জন্য চিঠি দেওয়া কি শুধু পলাতকদের ধরে আনা, লোকেট করা বা জিজ্ঞাসাবাদ, যোগাযোগ করার জন্যই? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছ থেকে অনেক ধরনের সহযোগিতা, ইনফরমেশন চাই। আমরা সব ধরনের তথ্য চাই। যেমন- জেনারেল মইন ঘটনার সময় চিফ অব আর্মি ছিলেন। তাকে আমাদের খুব দরকার, তার স্টেটমেন্ট আমাদের খুব দরকার। কারণ, কেন অপারেশনটা সেখানে ফেল করলো। কেন এত সেনা অফিসারকে হত্যা করা হলো। আবার শেখ হাসিনাও ভারতে পালিয়ে গেছেন। জেনারেল মঈন ও শেখ হাসিনাসহ এরকম লোকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চ্যালেঞ্জগুলো আমরা দেখছি। আমাদের কাছে অন্য কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এই লোকগুলোকে কানেক্ট করা চ্যালেঞ্জ।

বিডিআর বিদ্রোহের পর বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সেসব তদন্ত কমিটি রিপোর্টও জমা হয়েছিল। সেসব রিপোর্ট আপনারা আমলে নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর চৌধুরী (বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) ও সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেয়েছি। আমরা এগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরের তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। সচিব আনিসুজ্জামানের তদন্ত রিপোর্ট পাইনি, তবে সামারি পেয়েছি।

বিদ্রোহের পর মামলায় যারা কারাগারে ছিলেন, কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিশন জিজ্ঞাসাবাদ করবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করবো না। তবে যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তারা চাইলে আমাদের তথ্য দিতে পারেন, অথবা ওয়েবসাইটেও জানাতে পারেন। আমাদের পরিকল্পনা আছে আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলার।

আপনারা কি ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে দুটি বাধা তো আছেই। একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়, আরেকটি বিদেশে পালিয়ে যাওয়াদের কানেক্ট করা, জিজ্ঞাসাবাদ করা। অভ্যন্তরীণটা হয়তো সহজেই সম্ভব, কিন্তু বিদেশে পালানোদের কানেক্ট করা তো কঠিন। সেজন্য হয়তো বাড়তি সময় লাগতে পারে।

জেনারেল মঈন নিজেই বই লিখেছেন, ইউটিউবে তার বক্তব্যের ভিডিও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত বিষয়ে তিনি সহযোগিতা করবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা? জানতে চাইলে তদন্ত কমিশন প্রধান বলেন, তিনি যা বলেছেন তাই আমরা কেন বিশ্বাস করবো? তিনি যা বলেছেন, আসুক আমাদের সামনে বলুক। তখন জানার চেষ্টা করবো। তাকে ফেরানোর জন্য দূতাবাসকে চিঠি দিয়েছি। কোনো উত্তর এখনো পাইনি। পেলে বলতে পারবো।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফেরাতে কোনো চিঠি আপনারা ভারতকে দিয়েছেন কিনা? জানতে চাইলে মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, ভারত বিষয় না, আমরা তো বিদেশে পালিয়ে যাওয়াদের দরকার বলে দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো জানে, আমরা কাকে কখন চাই। তবে আমাদের আগে নিশ্চিত হতে হবে কে কোথায় আছে। এরপর আমরা যোগাযোগ করবো।

পাঁচদিন পরই বিডিআর বিদ্রোহের ১৬ বছর। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির পরই চাউর হয়, বিডিআরকে ভেঙে ফেলা ও বাহিনীর সক্ষমতা নষ্ট করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। এ বিষয়টি তদন্ত করছেন কিনা? সেটি করলে তা কোন পর্যায়ে রয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র যদি থাকে তা বের করার জন্য। এটা আমরা সবাই জানি সেজন্য অপরাধ কোনো দেশ বা কোনো ব্যক্তি বা কোনো বিশেষ অর্গানাইজেশনকে আমরা সামনে রাখছি না। আমরা তদন্ত করছি, যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় কেউ জড়িত আছে সেটা অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন। আমরা তথ্য দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি কমিশনের পক্ষ থেকে। আমরা অনুরোধ করছি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। আমরা যে ওয়েবসাইট (https://www.bdr-commission.org/) খুলেছি সেখানে ভালো সাড়া পাচ্ছি।

পিলখানার ভেতরে অনেক সেনা অফিসার ও তাদের পরিবার জিম্মি ছিলেন। অনেকে হতাহতের শিকার হয়েছেন। আবার অনেকে ফিরে এসেছেন। জীবিত ফিরে আসাদের লাইভ অভিজ্ঞতা আপনারা শুনেছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তিনজন শহীদ সেনা অফিসারের পরিবারের বক্তব্য শুনেছি। যেমন বলতে পারি, শহীদ মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে বক্তব্য দিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।