ঢাকা: ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে স্থানীয় ছোটখাটো বিরোধ মীমাংসা এবং গ্রামীণ জনগণের মাঝে বিচারিক সেবা নেওয়ার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগীয় প্রকল্প এলাকার ৮৮৬টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালতগুলোকে আরও সক্রিয় করতে বিভাগীয় পর্যায়ে দিক-নির্দেশনা লাভ করা।
ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) কে এম আলী আযমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সম্মেলনে প্রায় ৩৭০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গ্রাম আদালত বিচারিক সেবার একটি কার্যকর মাধ্যম, যা তৃণমূলপর্যায়ে জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেন এবং স্থানীয় সরকার, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এ প্রকল্পে সহযোগিতায় জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উপ-আবাসিক প্রতিনিধি মিস্ সোনালি দায়ারাত্ন গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীরা স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছেন। পাশাপাশি গ্রাম আদালত উন্মুক্ত বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।
অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তারিকুল আলম বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার (ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ) ৮৯টি উপজেলায় প্রকল্পটির স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর সেবা গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নেতৃত্ব ও ভূমিকা প্রশংসনীয়।
‘গ্রাম আদালত’ একটি সরকারি সেবা। ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পটি চালু করে। প্রকল্পটি শুরুর পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ন্যায়বিচার সহজলভ্য করে লাখ লাখ মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছে। '
সম্মেলনে ২ জন উপকারভোগী (১ জন নারী, ১ জন পুরুষ) গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গ্রাম আদালত ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এছাড়া ২ জন যুব প্রতিনিধি গ্রাম আদালত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গ্রাম আদালতের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এবং ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাতেম আলী, মো. আব্দুর রহিম এবং বিভাষ চক্রবর্তী।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা, স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা রিসোর্স টিমের সদস্য, জেলা তথ্য ও লিগ্যাল এইড অফিসার, বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মকর্তা, গ্রাম আদালত প্রকল্পের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিনিধি।
গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ— তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম ও এর অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপনা করেন মৌসুমী সরকার রাখী।
বক্তারা প্রকল্প এলাকাসহ দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম আদালতগুলোকে আরও সক্রিয় করতে জেলা উপজেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিতকরণ ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে তারা গ্রাম আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে চেয়ারম্যানদের অনুকরণীয় উদ্যোগ নেওয়ার ওপরও জোর দেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চেয়ারম্যানরা গ্রাম আদালতের কার্যকরীকরণে গ্রাম আদালতের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের সব পর্যায়ে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮,২০২৫
এএটি