রাজশাহী: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের রুচি ও অভিরুচি। আধুনিকতার ভিড়ে চাপা পড়েছে বহু পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী রহমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ এবং তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও রহমানিয়া প্লাস দিল্লির শাহী ফিরনির একমাত্র বিক্রেতা। এক নামেই যার পরিচিতি। তাই প্রতিবছর রমজান মাস এলে রহমানিয়ার শাহী ফিরনি ছাড়া এখানকার অনেক মানুষের ইফতারে যেন পরিপূর্ণতা আসে না আজও।
বর্তমান সময়ের আধুনিক স্বাদ ও গন্ধের মনমাতানো ইফতারসামগ্রীর ভিড়ে রাজশাহীতে এখনও জায়গা দখল করে আছে ঐতিহ্যবাহী শাহী ফিরনি। মহানগরীর গণকপাড়া মোড়ের রহমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর এ ফিরনি ১৯৫০ সাল থেকে তৈরি করা হচ্ছে।
এ রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য ইফতারের মধ্যে থরে থরে সাজানো রয়েছে ‘শাহী ফিরনি’। ছোট ছোট মাটির পাত্রে পাওয়া যাচ্ছে সুগন্ধি ও সুস্বাদু মিষ্টান্ন এ খাবারটি। প্রতিটি পাত্রে ফিরনি মিলবে প্রায় ১০০ গ্রাম, যা বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৩৫ টাকা করে।
রাজশাহী রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ও ঐতিহ্যবাহী রহমানিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী রিয়াজ আহমেদ খাঁন জানান, আজ থেকে ৭৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫০ সালে তার দাদা আনিসুর রহমান খাঁন দিল্লি থেকে সুস্বাদু এ খাবারটি রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে এর রন্ধনশৈলী ও উপকরণ নিয়ে রাজশাহীতে এর প্রচলন শুরু করেন। তার সুবাদে রাজশাহীতে বসেই মানুষ দিল্লির সেই স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পান। মূলত সেইকাল থেকে এ সময় পর্যন্ত রাজশাহীতে শাহী ফিরনির কদর যেন এক রত্তিও কমেনি। যুগের পর যুগ ধরে স্বাদের ঐতিহ্য বহন করে আসছে দিল্লির এ ‘শাহী ফিরনি’। এভাবেই পার করছে ছয় যুগেরও বেশি সময়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্বাদ গ্রহণ করে চলেছে রহমানিয়ার এ ফিরনির। সে সময় মূল্য ছিল মাত্র ছয় আনা। আর এখন এর দাম ৩৫ টাকা। তবে স্বাদ ও যুগ হিসেবে এখনও তা অনেক কম।
রিয়াজ আহমেদ বলেন, গরুর খাঁটি দুধ, সুগন্ধি পোলাওয়ের চালের গুঁড়াসহ আরও কয়েকটি সিক্রেট উপাদান দিয়ে এ ‘শাহী ফিরনি’ তৈরি করার পর মাটির একটি পাত্রে করে গরম অবস্থায় জমিয়ে রাখা হয়। ঠান্ডা হয়ে পাত্রের ভেতর জমে গেলে পরে তা বিক্রি করা হয়। তবে আগে প্রতিদিন পাওয়া গেলেও বর্তমানে রমজান মাস ও বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে বিশেষ অর্ডার ছাড়া শাহী ফিরনি তৈরি হয় না। স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় এ শাহী ফিরনির জন্য রাজশাহীর রোজাদারদের মধ্যে প্রচুর চাহিদা। তাই এ বছর প্রথম রমজান থেকেই ইফতার আইটেমের শীর্ষে রয়েছে তাদের এ ‘শাহী ফিরনি’। নামডাক থাকায় ভারতের রাজধানীতেও এ ফিরনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রিয়াজ খাঁন।
হোটেলের সেলসম্যান মো. কালু বলেন, রমজান মাসে এ শাহী ফিরনি তাদের সেরা আকর্ষণ। এছাড়া রমজানজুড়ে রহমানিয়া হোটেলে ইফতারের বিশাল আয়োজন রয়েছে। রহমানিয়ার ইফতার আয়োজনে প্রতিদিনই থাকছে- খেজুর, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, সমুচা, বুট ও নিমকপাড়া। এছাড়া খাসির তেহারি, চিকেন বিরিয়ানি, কাচ্চি, শিক কাবাব, কাটি কাবাব, চিকেন কাবাব, চিকেন টিক্কা, চিকেন সাসলিক, ক্রিসপি চিকেন, গ্রিল চিকেন, শামি কাবাব, সমুচা খাসির কিমা, শাহী পেঁয়াজু, কোপ্তা, ঘি দেওয়া স্পেশাল হালিম ও খিচুড়ি এবং সিঙ্গারা পাওয়া যাচ্ছে তাদের এ রেস্তোরাঁয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৫
এসএস/আরবি