রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর দড়িখরবোনা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে সংঘর্ষের রেশ দড়িখড়বোনা মোড় ছাড়াও উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই এসব সড়কের দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক চলাচলকারী লোকজন আতঙ্কে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একজন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলও রয়েছে। সংঘর্ষের সময় মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত এক সদস্যসহ চার জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) সদস্যসহ তোফাজ্জল হোসেন, দড়িখড়বোনা এলাকার লাভলী খাতুন, তার আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা লামিয়া ও রেলওয়ের কর্মচারী মো. রনি। এর মধ্যে লাভলী খাতুন মহানগর যুব মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। রনি পথচারী। সংঘর্ষের ঘটনার সময় রনি ও সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।
ঘটনার পর তোফাজ্জলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর বাড়িতে হামলার সময় মহানগর যুব মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলী ও তার মেয়ে আহত হন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে লাভলী মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ থেমে থেমে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। খবর পেয়ে পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেলের আগুন নেভায়।
উভয় পক্ষের সংঘর্ষের সময় মহানগরীর দড়িখড়বোনা এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাত ঘেঁষে পার্কিং করা মোটরসাইকেল তিনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল দৈনিক আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসান সাব্বিরের। সংঘর্ষের সময় তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, বিএনপির স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে। ওই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহিলা দল নেত্রী লাভলী ও তার অনুসারীরা দড়িখরবোনা এলাকার একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ থাকেন বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তার ভাই সাব্বির বাবুর নামে ছাত্রজনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। আর লাভলী দাবি করেন ভবনের ভেতরে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে ঢুকতে দেখেছেন। তারা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথবাহিনী অভিযানে আসে। কিন্তু ওই বহুতল ভবনের ভেতর প্রথম দফায় তল্লাশি চালিয়ে মোস্তাক আহমেদকে পাওয়া যায়নি।
তবে তাকে না পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভবনটি ঘিরে রাখেন। পরে দ্বিতীয় দফার তল্লাশিতে ওই ভবন থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে পেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ এর জের ধরেই স্থানীয় দুইটি পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৫
এসএস/জেএইচ